প্যারিস: ফ্রান্সে তখনও সরকারিভাবে করোনা সংক্রমণের খবর ছড়ায়নি। প্রথম যাঁকে সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত বলে দাবি করা হয়েছিল, সেই ঘটনারও একমাস আগে সংক্রমিত হয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ফ্রান্সের গবেষকদের একটি দল জানিয়েছে, সে দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণের খবর সরকারিভাবে জানানো হয়েছিল জানুয়ারির শেষের দিকে। তারও এক মাস আগে, ২৭ ডিসেম্বর নাগাদ প্রথম একজনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই ব্যক্তি তাঁদের করোনা ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি ও সংক্রমণের বৈশিষ্ট্য বুঝতে সাহায্য করবেন।


ফ্রান্সের গবেষকদের ওই দলের প্রধান ইভস কোহেন জানিয়েছেন, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে সে দেশে মোট ২৪জনের ফ্লু-র পরীক্ষা নেগেটিভ আসার পর চিকিৎসা করা হয়েছিল। তখনও কোভিড-১৯ অতিমারীর রূপ নেয়নি। সেই ২৪জনের মধ্যে একজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। সংক্রমিত ওই ব্যক্তির বয় ৪২ বছর এবং তিনি আলজিরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পেশাগতভাবে তিনি মৎস্য ব্যবসায়ী আর সেই সূত্রেই ফ্রান্সে ছিলেন দীর্ঘদিন।

ফ্রান্সে করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর একমাস আগেই একজনের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি দেখে অনেকে অবাক হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) জানিয়েছে, এই তথ্য একেবারেই চমকপ্রদ নয়। হু-র মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেছেন, ‘সম্ভবত এরকম আক্রান্তের কথা আমরা আরও জানতে পারব। যাঁরা অতিমারী ছড়ানোর অনেক আগেই সংক্রমিত হয়েছিলেন।’ তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, সব দেশেরই উচিত ২০১৯ সালের শেষের দিকের বিভিন্ন রিপোর্ট খতিয়ে দেখা ও পুনর্মুল্যায়ণ করা প্রয়োজন। তাতে করোনা নিয়ে গবেষণা অন্য খাতে বইতে পারে।

ব্রিটেনের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন বল বলেছেন, ‘হতেই পারে অনেক আগে করোনা সংক্রমণ বিস্তার পেতে শুরু করেছিল। তবে এখনই এটা নিয়ে চূড়ান্ত অবস্থান নেওয়ার সময় হয়নি।’ লিডস ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল রিসার্চের কর্তা স্টিফেন গ্রিফিন আবার হু-র মতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বলছেন, ‘এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটা অনুসন্ধান।’

একটি ফরাসি টিভি চ্যানেলে কোহেন বলেছেন, ফ্রান্সে আক্রান্ত সেই ব্যক্তি ২০১৯ সালের অগস্টে শেষবার আলজিরিয়া গিয়েছিলেন। তখনই তিনি আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। তবে তিনিই ফ্রান্সের ‘পেশেন্ট জিরো’ বা প্রথম আক্রান্ত কি না, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।