গত বছর ‘মিস জাপান’ হয়েছিলেন কালো মেয়ে আরিয়ানা মিয়ামোতো। তা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়া। বেশিরভাগের বক্তব্য ছিল, খাঁটি জাপানি কারও এই খেতাব জেতা উচিত ছিল, কোনও ‘হাফু’-র নয়। জাপানি ভাষায় বর্ণসংকর বোঝাতে ‘হাফু’ শব্দ ব্যবহার করা হয়।
২২ বছরের প্রিয়ঙ্কা হাতির প্রশিক্ষক। কিকবক্সারও। নিজেকে বর্ণনা করেন ‘এলিফ্যান্ট হুইসপারার’ হিসেবে। তিনি বলেছেন, আরিয়ানার আগে খাঁটি জাপানি মেয়েরাই শুধু জাপান সুন্দরী হওয়ার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু আরিয়ানার জয় তাঁকে এই প্রতিযোগিতায় নামার প্রেরণা জোগায়। ভারতীয় বাবা ও জাপানি মায়ের মেয়ে প্রিয়ঙ্কা জাপানের মাটিতে জাতি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়ার শপথ নিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমরা জাপানি। হ্যাঁ, আমি অর্ধেক ভারতীয়, মানুষ প্রশ্ন করেন আমি ‘খাঁটি’ কিনা জানতে- আমার বাবা ভারতীয়, আমি গর্বিত আমার মধ্যে ভারতীয়ত্ব রয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে আমি জাপানি নই”।
ছোটবেলায় ৩ বছর ক্যালিফোর্নিয়ায় কাটান প্রিয়ঙ্কা, ১ বছর ভারতে। তারপর ১০ বছর বয়সে ফেরেন জাপানে। তখন চামড়ার রং নিয়ে হাসিঠাট্টার শিকার হতে হয় তাঁকে। প্রিয়ঙ্কা জানিয়েছেন, তাঁর মত অনেক বর্ণসংকর ছেলেমেয়েকেই এভাবে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হতে হয়েছে, এতে কষ্টও পেয়েছেন যথেষ্ট। কেউ তাঁকে ছুঁয়ে ফেললে এমন ব্যবহার করত, যেন খারাপ কিছু গায়ে লেগেছে। কিন্তু সেই আচরণ তাঁকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে শিখিয়েছে।
৫ ফুট ৮ ইঞ্চির দীর্ঘাঙ্গী তরুণী সাধারণ জাপানি মেয়েদের তুলনায় অনেকটাই লম্বা। তাঁর ‘বলিউড লুকস’ অন্যদের থেকে তাঁকে বেশ কিছুটা সুবিধেজনক জায়গায় পৌঁছে দেয়। ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতায় তিনি জাপানের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
আরিয়ানার সময় যা হয়েছিল, প্রিয়ঙ্কার জয়ে সেভাবে আপত্তি করে হইচই ওঠেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ বলছেন, ‘মিস জাপান’ প্রতিযোগিতায় আর জাতীয় চরিত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কারও মতে, এভাবে হাফু মেয়েদের জিতিয়ে দিয়ে যেন বলা হচ্ছে, খাঁটি জাপানি সুন্দরীরা খেতাবের যোগ্য নয়।
প্রিয়ঙ্কা কিন্তু জানিয়েছেন, ছোটবেলায় ঠাট্টা ইয়ার্কির শিকার হতে হওয়ায় নিজের পরিচয় নিয়ে তিনি সংশয়ে ছিলেন। কিন্তু এতদিন ধরে জাপানে রয়েছেন তিনি, নিজেকে জাপানি বলে ভাবতে আর কোনও অসুবিধে হয় না তাঁর।