বিজেন্দ্র সিংহ, বাংলাদেশ: রোহিঙ্গা (Rohingya ) শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ সরকার (Bangladesh Government)। প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে সে দেশের সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে তারা। সেপ্টেম্বরে শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে এসে প্রধান মন্ত্রী সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে বাংলাদেশ সরকার সূত্রের খবর। রোহিঙ্গা শিবির থেকে এবিপি আনন্দর বিশেষ প্রতিবেদন।
রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট: সেদিনের সিরিয়া থেকে আজকের ইউক্রেন - গত কয়েকবছরে বারবার শরণার্থী সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে ইউরোপ। কিন্তু, গত ৫ বছর ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্কটের সঙ্গে যুঝছে আমাদেরই প্রতিবেশী বাংলাদেশও। এই মুহূর্তে শরণার্থী সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্প যা বাংলাদেশের কক্স বাজারে অবস্থিত। সেই ৬ হাজার ৫০০ একরের সুবিশাল রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই পৌঁছেছে এবিপি আনন্দ। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ হাইওয়ে ধরে সোজা দক্ষিণে গেলে, কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। কাছেই নাফ নদী। যা বাংলাদেশ আর মায়ানমারকে আলাদা করেছে। ওপারে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। রোহিঙ্গা বিতাড়ন শুরু হওয়ার পরে, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট, নাফ নদী পেরিয়েই অন্তত ৬ লক্ষের বেশি মানুষ ঢুকে পড়েছিলেন বাংলাদেশে। যে সংখ্যাটা দিনে দিনে ১১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। কুতুপালং-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে লাখো লাখো রোহিঙ্গার। তাদের রোজনামচাই ক্যামেরাবন্দি করেছে এবিপি আনন্দ।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অস্বাস্থ্যকর অবস্থা। শিক্ষা, কর্মসংস্থানের অভাব দিনে দিনে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা। কাঁটাতার ঘেরা শরণার্থী শিবির থেকে অনেক রোহিঙ্গা মিশে গেছে সাধারণ জনতার ভিড়ে! ফলে আশঙ্কার মেঘ জমছে বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা কর্তা কমোডোর মহম্মদ নুরুল আবসার জানাচ্ছেন, অপরাধের প্রবণতা বাড়ছে। মাদক পাচার, অস্ত্র পাচারের মতো অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে। একইসঙ্গে ডিপ্রেশন বাড়ছে। ভবিষ্যতে মারাত্মক কোনও কিছুর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যা ভারতের জন্যও ভয়ানক হতে পারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে দেশ-বিদেশের শতাধিক NGO। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ দলও আছে। নানাভাবে তারা রোহিঙ্গাদের পাশে থাকার কাজ করছে। কিন্তু, দিন গুজরানের জন্য তা কি যথেষ্ট?
বাংলাদেশের এক রোহিঙ্গা শরণার্থীর কথায়, “আমাদের একটা প্রজন্ম নষ্ট হয়ে গেল। পড়াশোনা নেই। শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। না হলে ওখানে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের বহু বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা স্বদেশে ফিরতে চান। কিন্তু, মায়ানমার সরকার কি তাদের আদৌ ফেরত নেবে? রোহিঙ্গা সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ সরকার এখন চাইছে ভারতের হস্তক্ষেপ। সেপ্টেম্বর মাসে নয়াদিল্লি সফরে আসার কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সমস্যার বিষয়ে তিনি কথা বলতে পারেন। বাংলাদেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন , “আমাদের ঘাড়ে বোঝা নিতে পারছি না। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী আলোচনা হলে এই বিষয়ে আলোচনা হবে, ভারত সহযোগিতা করুক তাদের ফেরত পাঠাবে। তাছাড়া পুনর্বাসনের জন্য বন্দোবস্ত যাতে করা হয়, সেজন্য ভারত-সহ অন্য দেশ যেন দেখে সেটা আমরা চাই।’’ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির স্থানান্তরিত করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। সেখানে ভাসান চরে ৩৪ হাজার একর ফাঁকা জায়গার ওপর তৈরি হয়েছে নতুন ক্যাম্প। যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে।