লহৌর: রাত পোহালেই ভাগ্য নির্ধারণ। তিনি ক্ষমতায় টিকে থাকবেন, নাকি পদত্যাগ করতে হবে, সংসদের আস্থা ভোটেই তা ঠিক হবে। সেই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের (Pakistan Politics) যুবসমাজের উদ্দেশে বার্তা দিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান (Imran Khan)। তাঁর অভিযোগ, বিদেশি শক্তির সঙ্গে মিলে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন মীরজাফর, মীর সাদিকরা।
নিয়ম মাফিক শনিবার ফোনে দেশবাসীর অভাব অভিযোগ শুনতে ফোনালাপ অংশ নিতে আসেন ইমরান। ফোন তোলার আগে ভিডিয়ো বার্তা প্রকাশ করেন তিনি। তাতে যুবসমাজকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নামতে আহ্বান জানান। বলেন, ‘‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান। ভবিষ্যতের লড়াইয়ের সূচনা হতে চলেছে। এই সময় আমাদের সামনে দু’টি রাস্তা খোলা। ধ্বংস না গর্ব, কোন রাস্তায় হাঁটব, সেই সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে। শান্তির দূত মহম্মদের রাস্তা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু রাস্তা কঠিন হলেও, তা সকলের জন্য মঙ্গলকর। আর এই কঠিন রাস্তাই দেশে বিপ্লব এনেছিল।’’
ইমরানের মুখে মীরজাফর, মীর সাদিকের কথা
বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বিরোধী শিবির তাঁকে ক্ষমতাচ্যূত করতে চাইছে বলেও ফের এ দিন অভিযোগ করেন ইমরান। বলেন, ‘‘পাকিস্তানের রাজনীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দেশবাসীকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে সমাজ সততা এবং ন্যায়ের রাস্তায় চলে, তারাই নবজীবন লাভ করে। নিরপেক্ষ অবস্থান অমঙ্গলই ডেকে আনে। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। ছাগলের মতো রাজনীতিক কেনাবেচা চলছে। বিদেশের মাটিতে এই ষড়যন্ত্রের জাল বোনা শুরু হয়েছিল। আর দেশের মীরজাফর, মীর সাদিকরা সেই কাজে সাহায্য করছেন।’’
ইমরানের সাফ যুক্তি, ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকদের ক্ষমা করে না। পাকিস্তানের ইতিহাসও মীরজাফর, মীর সাদিকদের ভুলবে না। তাই পাকিস্তানের আম জনতাকেই জায়িত্ব নিতে হবে। বিশ্বাসঘাতকদের যেন তাঁরা না ভোলেন, ক্ষমা না করেন, তার জন্য দেশবাসীকে আর্জি জানান ইমরান। তিনি যে হাত গুটিয়ে বসে নে, তা-ও জানিয়ে দেন ইমারন। বলেন, ‘‘আইনজীবীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ওঁদের ছাড়ব না। শাস্তি দিয়ে তবে ছাড়ব। কী ধরনের আইনি পদক্ষেপ করা যায়, তা আজ রাতের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলব।’’ রবিবার সংসদের আস্থাভোটে দলের সাংসদরে অংশ নেওয়ার নির্দেশও দেন ইমরান।
সেনার অঙ্গুলিহেলনেই কি ইমরানের বিরুদ্ধে আস্থাভোট, উঠছে প্রশ্ন
ইমরান জানিয়েছেন, ‘প্রতিষ্ঠান’-এর তরফে তাঁকে তিনটি রাস্তা বেছে নিতে বলা হয়, ১) পদত্যাগ, ২) আস্থাভোট, ৩) নতুন করে নির্বাচন। ‘প্রতিষ্ঠান’ বলতে কাদের বোঝাচ্ছেন, তা যদিও স্পষ্ট করেননি তিনি। কিন্তু সূচনা পর্ব থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিকে কার্যত নিয়ন্ত্রণ করে আসছে দেশের সেনা (Pakistani Army)। ইমরানের বিরুদ্ধে বিরোধীরা যখন একজোট, সেই সময় সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে দেখা করেন দেশের সেনা প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। তাঁর নির্দেশেই কি আস্থাভোটে তিনি আপত্তি জানাননি, সেই প্রশ্নও এড়িয়ে গিয়েছেন ইমরান।
চার বছরের ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে গণ আন্দোলন শুরু হয়েছে, যার অভিধানিক নাম রাখা হয়েছে পাকিস্তান ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট (PDM)। এই আন্দোলনে সামিল রয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (PML-N), জামিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম ফজল (JUI-I) এবং অন্য বেশ কিছু বিরোধী দল। বিদেশ থেকে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ (Nawaz Sharif) এই আন্দোলনে ইন্ধন জোগাচ্ছেন, এমন অভিযোগও সামনে এসেছে। আবার সাম্প্রতিক কালে রাশিয়া এবং চিনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা ইমরানের উপর আমেরিকাও অসন্তুষ্ট বলে শোনা যাচ্ছে।
কোভিড-উত্তর পর্বে পাকিস্তানের অর্থনীতি কার্যত তলিয়া যাওয়ার মুখে। এমন অবস্থায় ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন তো বটেই, সরকারি কোষাগারের টাকা অপ্রয়োজনে খরচের অভিযোগও উঠেছে। পেট্রল-ডিজেলের শুল্ক যথাক্রমে ১০ এবং ৫ টাকা করে কমিয়ে সম্প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ইমরান। কিন্তু তাতেই পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। তার মধ্যেই বিরোধীদের তরফে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব (No Trust Motion) জমা পড়ে। রবিবার সেই মতো আস্থাভোট হতে চলেছে। ৩৪২ আসনের পাকিস্তান সংসদের ম্যাজিক সংখ্যা ১৭২ হলেও, ইমরানের দলের ১৫৫ জন সাংসদ রয়েছেন। কিন্তু শরিক দলের অনেকেই ইমরানের উপর খাপ্পা বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও ইমরানের দাবি, অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁর কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবেন না কেউ।