বাগদাদ: একটার পর একটা ভূখণ্ড হাতছাড়া হচ্ছে আইএসআইএসের। তার সঙ্গে ধরাশায়ী হচ্ছে তাদের নিজস্ব বিজনেস মডেল। পেট্রো ডলার বেরিয়ে যাচ্ছে জলের মত।


এ ব্যাপারে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অফ র‍্যাডিক্যালাইজেশন অ্যান্ড পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪-র মাঝামাঝি থেকেই খলিফার সাম্রাজ্যের আর্থিক উৎস প্রায় শুকিয়ে এসেছে। তখন থেকে ব্যাঙ্ক, তেলের কুয়ো আর মালের গুদামে নজর পড়েছে তাদের।

রিপোর্টটি বলছে, আইএসের আয় ২০১৪-য় ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে কমে ২০১৬-য় এসে দাঁড়িয়েছে ৮৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

কী করে হল এত লোকসান? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আইএস বহির্বিশ্বের কাছে স্রেফ জঙ্গি গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত হলেও তার প্রকৃত পরিচয় শুধু সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। এর দখলে প্রচুর জায়গা আছে। অর্থাৎ খরচও আছে সেইরকম। এদের রাস্তা ঠিক করতে হয়, শিক্ষকদের মাইনে দিতে হয়, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়। এ জন্য খরচ আছে, যা আল কায়দাকে কখনও ভাবতে হয়নি।

তবে অর্থ কমে গিয়েছে মানে এমন নয়, যে তাদের হামলার ক্ষমতা কমে গিয়েছে। বিশেযজ্ঞদের কথায়, প্যারিস, ব্রাসেলস আর বার্লিন হামলা বলে দিচ্ছে, কম খরচে মারাত্মক আঘাত হানতে তারা ভালই সক্ষম। দেখা যাচ্ছে, আইএসের সাহায্য ছাড়াই নিজেদের অর্থের জোরে ইউরোপ, আমেরিকায় আইএস মতপুষ্টরা আঘাত হেনেছে সাধারণ মানুষের ওপর।

আইএসের অর্থের মূল উৎস হল কর। রয়েছে তেল বিক্রির আয়, ক্ষতিপূরণের টাকা, ডাকাতির ও জোর করে আদায়ের টাকা। কিন্তু এইসব আয়ের রাস্তা খুলতে নতুন নতুন এলাকা দখল প্রয়োজন। তা তো হচ্ছেই না, বরং আইএসের হাত থেকে এলাকা বেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। ২০১৪-র অগাস্টে তাদের হাতে ইরাকের যতটা দখল ছিল, তার ৬২ শতাংশ এর মধ্যে খুইয়েছে তারা। একইভাবে সিরিয়ার ৩০ শতাংশ এলাকা বেরিয়ে গিয়েছে হাত থেকে।

তবে জনৈক মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ জানাচ্ছেন, এর মানে এই নয়, যে আইএস দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে, তাদের হাতে আর খরচ মেটানোর টাকা নেই। তবে তাদের টাকার উৎস শুকিয়ে এসেছে, এটা সত্যি। ফলে তৃণমূল স্তরের জঙ্গিদের টাকা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে তারা। যদিও সে জন্য তাদের আঘাত হানার ক্ষমতা কমেনি।

তবে উত্তর ইরাকের মোসুল যদি ইরাকি সেনা উদ্ধার করতে পারে, তবে সত্যিই রীতিমত ধাক্কা খাবে ব্র্যান্ড আইএস। তাদের পতাকার তলায় জঙ্গি হামলা চালানোর যে আকর্ষণ, তাও আর আগের মত তীব্র থাকবে না এক শ্রেণির যুবকযুবতীর কাছে।