নয়াদিল্লি: পাঁচদিনেই ভয়াবহতা চরমে। মৃত্যুসংখ্যা ৪ হাজার ছুঁইছুঁই। তার মধ্যেই ভয়ঙ্কর অভিযোগ সামনে আসছে। হামাসের মোকাবিলা করতে গাজায় হোয়াইট ফসফরাস বোমা নিক্ষেপ করার অভিযোগ উঠল ইজরায়েলের বিরুদ্ধে (White Phosphorous Bombs)। বুধবার গভীর রাতে ইজরায়েল গাজায় হোয়াইট ফসফরাস বোমা ফেলে বলে অভিযোগ সামনে আসছে। ঝাঁকে ঝাঁকে আগুনের গোলার মতো স্ফূলিঙ্গ মাটিতে নেমে আসার একটি ভিডিও-ও সামনে এসেছে। ওই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করে দেখেনি এবিপি আনন্দ। কিন্তু ক্যামেরায় যা ধরা পড়েছে, তা দেখে প্রমাদ গুনছে আন্তর্জাতিক মহল। (Israel-Palestine War)


হোয়াইট ফসফরাস বোমা কী?


হোয়াইট ফসফরাস মোমের মতো চটচটে, হলুদ রংয়ের এক রাসায়নিক। তীব্র গন্ধ, খানিকটা রসুনের মতো। অত্যন্ত দাহ্য একটি রাসায়নিক হোয়াইট ফসফরাস। বিস্ফোরণের সময় অতি উজ্জ্বল আলোর ছটায় ঢেকে যায় চারিদিক। রাতের অন্ধকারে শত্রুপক্ষকে নিধনে, হিংসাত্মক কাজে এই রাসায়নিক ব্যবহৃত হয় অনেক দেশেই। (Israel-Palestine Conflict)


এই হোয়াইট ফসফরাস রাসায়নিক ব্যবহার করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটালে, তাপমাত্রার পারদ একধাক্কায় ১৩০০ ডিগ্রিতে পৌঁছে যায়। আলোর ঝলকানিতে ধাঁধা লেগে যায় চোখে।  ধূসর ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারিদিক। এমন পরিস্থিতিতে স্মোকস্ক্রিন সেনসিটিভ জোন তৈরি করতে হয় মানুষের নিরাপত্তার জন্য। এই বোমা বিস্ফোরণ ঘটলে গদ্রুত গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রাসায়নিকটি চটচটে হওয়ায় মাটি কামড়ে কার্যত পড়ে থাকে বোমার উপাদান। জামাকাপড় এমনকি গা থেকেও উঠতে চায় না। এমনকি ক্ষত সেরে গেলেও, ভিতরে থেকে যেতে পারে।



আরও পড়ুন: Israel-Palestine War: গভীর রাতে গাজায় পড়ল ফসফরাস বোমা! পঞ্চম দিনে যুদ্ধে হত ৩৬০০


হোয়াইট ফসফরাস বোমার ইতিহাস


আনুমানিক ১৮০০ সাল থেকে হোয়াইট ফসফরাসকে বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে এর ব্যবহার করেছিলেন আইরিশরা।  আইরিশরাই এর ফর্মুলা বের করেছিলেন বলে জানা যায়, যা 'ফেনিয়ান ফায়ার' নামে পরিচিত। দুই বিশ্বযুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীও এর ব্যবহার করেছে। ইরাকের ফল্লুজায় রাসায়নিক বোমা হিসেবে হোয়াইট ফসফরাস বোমা ব্যবহার করেছে আমেরিকাও। শেষ বার, ইউক্রেনের বাখমুটে রাশিয়া হোয়াইট ফসফরাস বোমা ব্যবহার করে। 


ঘনবসতিপূর্ণ গাজায় এবার হোয়াইট ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ উঠল ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। আর তাতেই আতঙ্কে প্রহর গুনছে আন্তর্জাতিক মহল। কারণ হোটাইট ফসফরাস বোমার ব্যবহার নিষিদ্ধ। নিরীহ নাগরিকদের উপর হোয়াইট ফসফরাস বোমার প্রয়োগ যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় প্রস্তাব হোয়াইট ফসফরাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে প্রস্তাব পাস হয়। ১৯৮০ সালে গোটা বিশ্বে এই প্রস্তাবে সম্মত হয়। অগ্নিসংযোগকারী যাবতীয় অস্ত্রের উপর বিধিনিষেধ চাপে।


তবে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রথম বার উঠছে না। এমনকি ২০০৬ সালে লেবানন যুদ্ধের সময় হোয়াইট ফসফরাস দিয়ে তৈরি মর্টার শেল ছোড়ার অভিযোগ স্বাকীরও করে নেয় তারা। ২০০৮-'০৯ সালে গাজা যুদ্ধের সময়ও ইজরায়েল হোয়াইট ফসফরসাম বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ ওঠে। সিরিয়ার যুদ্ধেও হোয়াইট ফসফরাস বোমা ব্যবহারের অভিযোগ সামনে আসে বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছেন মানবাধিকার কর্মীরা। কিন্তু বিশ্বের প্রায় সব শক্তিধর দেশই এই বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করেছে।