ক্রেমনো: এ এক চরম দুঃসময়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চিনের পর সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। মৃত্যুর ছায়া ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে সেখানে। এরই মধ্যে এই মারণ ভাইরাসের ধ্বংসলীলার ছবি ক্যামেরাবন্দি করতে হাতে ক্যামেরা তুলে নিয়েছেন ইতালির এক শহরের এক নার্স। মৃত্যুর ছায়ার সঙ্গে প্রতি মুহূর্তে পাঞ্জা লড়ার অবকাশেই কার্যত পেশাদার আলোকচিত্রীর মতোই ওই পুরুষ নার্সের ক্যামেরায় বন্দি হচ্ছে অবসাদমাখা টুকরো টুকরো মুহুর্তরা।
মারণ ভাইরাসের দাপট সবচেয়ে বেশি ইতালির লোম্বার্ডি অঞ্চলের ক্রেমানো শহরে। এই শহরেরই একটি হাসপাতালে পাওলো মিরান্ডা নামে ওই পুরুষ নার্স গত মাস থেকে অন্যান্য সহকর্মীদের মতোই ১২ ঘন্টা ধরে কাজ করছেন। রোগীদের শুশ্রুষার এই অক্লান্ত কাজের মাঝেও ছবি তুলতে ভুলছেন না পাওলো। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাস তাঁকে যেন এক অন্ধকার সুড়ঙ্গের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
করোনার তাণ্ডবলীলায় হাসপাতালের আনাচে কানাচে যেন হিমশীতল মৃত্যুর হাতছানি। পাওলো নয় বছর নার্সের কাজ করছেন। কিন্তু এমন ভয়াবহতার সম্মুখীন এর আগে তাঁকে কখনও হতে হয়নি। তিনি বলেছেন, গত নয় বছরের কেরিয়ারে চোখের সামনে অনেককেই মারা যেতে দেখেছেন। কিন্তু করোনার উপদ্রবে এ ধরনের অসহায় মৃত্যুলীলা এর আগে কখনও দেখতে হয়নি তাঁকে। এই অতিমারীতে যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের জীবনের শেষ সময়ে পাশে থাকতে পারছেন না কোনও প্রিয়জন। আক্রান্তকে তাঁর জীবনের লড়াই লড়তে হচ্ছে একা। আত্মীয়-পরিজনদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে পৃথিবী থেকে। এই ভয়বহতাই তাঁর কাছে সবচেয়ে মর্মান্তিক। পাওলো বলেছেন, এই দৃশ্য শিউরে ওঠার মতো।
করোনাভাইরাসের ভয়ে চিকিত্সাধীন কারুর পরিজনের হাসপাতালে আসার অনুমতি নেই। কাজেই চিকিত্সাধীনের সঙ্গে দেখা করাটাও প্রিয়জনদের কাছে অসম্ভব এবং সেইসঙ্গে বিপজ্জনকও। আর এ জন্যই পাওলো তাঁর ক্যামেরায় সেই মুহুর্তগুলি ধরে রাখছেন, যেগুলি বাইরের কেউ জানে না। সখের কারণেই একসময় ক্যামেরা হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। আর সেই ফটোগ্রাাফিই তাঁকে এই নিষ্ঠুর রোগের সাক্ষী করে তুলেছে।

করোনার করাল-গ্রাসে বিপন্ন জীবনের প্রতি মুহূর্তের লড়াই ক্যামেরাবন্দি করে সারা বিশ্বের সামনে যন্ত্রণার ছবি তুলে ধরছেন পাওলো।