নয়াদিল্লি: বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট-এর এক গবেষণায় উঠে এসেছে, ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ নেওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান বেশি হলে, ভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা কমে যাচ্ছে। 


ওই গবেষণার আরও দাবি, ভারতে পাওয়া ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে এই বিষয়টি আরও গুরুতর আকার ধারণ করছে। কারণ, এক্ষেত্রে শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। 


ওই জার্নালে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘করোনা নতুন ৩ প্রজাতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কমাতে হবে টিকা-ব্যবধান। দুটি ডোজের ব্যবধান না কমালে নতুন প্রজাতিকে রোখা সম্ভব নয়। প্রয়োজনে দিতে হতে পারে বুস্টার ডোজ।’


এর পাশাপাশি, ওই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, অন্য স্ট্রেনের তুলনায় ভারতের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় বেশি কার্যকর ফাইজারের ভ্যাকসিন। 


গতমাসে কোভিশিল্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করে কেন্দ্র। তার আগে এই ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ দেওয়া হত ছয় থেকে আট সপ্তাহের ব্যবধানে।


শুরুতে কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ নেওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান রাখা হত ৪ সপ্তাহ। পরে এই ব্যবধান বাড়িয়ে করা হয় ৪-৬ সপ্তাহ। তারপর ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ। আর এবার কেন্দ্র তা বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করে দেওয়া হয়। 


চলতি মাসের গোড়ায় ভারতে মেলা করোনাভাইরাসের "বি.১.৬১৭.২" স্ট্রেনকে "ডেল্টা ভেরিয়েন্ট" হিসেবে চিহ্নিত করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। একইভাবে, ভারতে মেলা "বি.১.৬১৭.১" স্ট্রেনকে "কাপ্পা ভেরিয়েন্ট" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


অন্যদিকে, ব্রিটেনে মেলা "বি.১.১.৭" স্ট্রেনের নাম দেওয়া হয় "আলফা ভেরিয়েন্ট"। একইভাবে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে মেলা ভিওসি-স্ট্রেনের নাম যথাক্রমে রাখা হয় "বিটা ভেরিয়েন্ট" ও "গামা ভেরিয়েন্ট"।


পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিপাইন্স, ব্রাজিল সহ বিভিন্ন দেশে মেলা ভিওআই স্ট্রেনের নামকরণ করা হয়েছে --- এপসিলন, জিটা, আয়োটা, থিটা ইত্যাদি নামে। 


করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে "বি.১.৬১৭.২" স্ট্রেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ভাইরাসের বলি হচ্ছেন। দিনে আক্রান্ত হচ্ছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। গবেষকরা জানতে পেরেছেন, ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের 'মূল কারিগর' করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। 


করোনার এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ বাড়িয়েছে বিশ্বের। এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছে ব্রিটেনের পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড। দেশের কোভিড ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা সবার সামনে এনেছেন তাঁরা। সেখানে বলা হয়েছে, প্রাথমিক প্রামাণ্য তথ্যের ভিত্তিতে আলফার থেকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে বেশি ক্ষতিকর মনে হয়েছে।


এই বিষয়ে সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে ব্রিটেনের হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির চিফ এক্সিকিউটিভ জেনি হ্যারিস বলেন, 'ব্রিটেনের মধ্যে এখন এই ভ্যারিয়েন্ট প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে। তাই আমাদের এই বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।'


এই পরিস্থিতিতে, ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মোকাবিলায় ব্রিটেনে টিকা-ব্যবধান ১২ সপ্তাহ থেকে কমিয়ে ৪-৮ সপ্তাহ করার পরামর্শ দেওয়া হয়ছে।