ঢাকা: দৈনিক গড়ে ৬৩২ জন হিন্দু বাংলাদেশ ছাড়ছেন। এই চলতি ‘প্রবণতা’ অব্যাহত থাকলে ৩০ বছর পর একজনও হিন্দু থাকবে না বাংলাদেশে। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ আবুল বরকত। গত ৪৯ বছর ধরে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীটির বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হার সেদিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বাংলাদেশের 'ঢাকা ট্রিবিউন' জানিয়েছে, অর্থনীতির এই অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর একটি সাম্প্রতিক বইয়ের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে তথ্য দিয়েছেন, ১৯৬৪ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ধর্মীয় কারণে নিগ্রহ, বৈষম্যের শিকার হয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন ১ কোটি ১৩ লক্ষ হিন্দু, যার অর্থ প্রতিদিন সংখ্যালঘু গোষ্ঠী থেকে গড়ে ৬৩২ জন ভিটেমাটি ছেড়েছেন। বছরে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৬১২।

বরকত জানিয়েছেন, এ নিয়ে গত ৩০ বছরের গবেষণায় তিনি দেখেছেন, ১৯৭১-এ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর থেকে সামরিক সরকার ক্ষমতায় থাকাকালেই হিন্দুদের দেশত্যাগ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।

বরকতের বইয়ে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের আগে দৈনিক দেশত্যাগী হিন্দুর সংখ্যা ছিল ৭০৫। ১৯৭১-১৯৮১ পর্বে সংখ্যাটা হয় ৫১২, ১৯৮১থেকে ১৯৯১ এর মধ্যে তা কমে হয় ৪৩৮। কিন্তু ১৯৯১ থেকে ২০০১, এই দশ বছরে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬৭-তে। ২০০১-২০১২ পর্বে প্রতিদিন বাংলাদেশ ছাড়েন ৭৭৪ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, পাকিস্তানি শাসনকালে  শত্রু সম্পত্তি বলে ঘোষণা করে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করে নেয়  তত্কালীন সরকার। পাক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর আবার সেই সম্পত্তি খাস ঘোষণা করে অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ সরকার। এই দুই পদক্ষেপের জেরে ভূমিহীন হয়ে পড়েন বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ হিন্দু, দাবি করা হয়েছে  বরকতের বইয়ে।

সংখ্যালঘু ও গরিবদের জমির ওপর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কাজি এবাদুল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন বলেন, সরকারকে সুনিশ্চিত করতে হবে যে, ভূমিপুত্রদের কোনও ক্ষতি হবে না।