ওয়াশিংটন:  বিশ্বের মুসলিম প্রধান সাতটি দেশ থেকে উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের আসা রুখতে শুক্রবার নয়া নির্দেশিকায় সই করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে কার্যত মর্মাহত নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী এবং তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই করা পাকিস্তানি কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। তিনি ট্রাম্পের কাছে আর্জি রেখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে অসুরক্ষিত মানুষগুলোকে এভাবে দূরে সরিয়ে দেবেন না।

মালালা মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় বলেন, তিনি কার্যত সেই সমস্ত শিশু, মহিলা, বয়স্ক মানুষ ও বাবাদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিলেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে চলা সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত। ২০১২ সালে এই মালালার ওপরই তালিবানরা হামলা চালিয়েছিল, কারণ পাকিস্তানে বসে সে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

বর্তমানে মালালা ইংল্যান্ডে থাকেন। তালিবানি হামলার থেকে নিজেকে সারিয়ে তুলে সারা বিশ্ব জুড়ে মুসলিম মহিলাদের সার্বিক উন্নতির জন্যে প্রচার করেছেন মালালা। সবচেয়ে কনিষ্ঠসদস্য হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন মালালা।

শান্তির দূত মালালা বলেন, ট্রাম্প এই নির্দেশিকায় সই করার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই ইতিহাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন, যাদের সারা বিশ্বে খ্যাতি ছিল, দরাজ হৃদয়ে উদ্বাস্তুদের এখানে প্রবেশাধিকার দেওয়া। মূলত এই শরণার্থীরাই আমেরিকাকে তৈরি করেছে তাঁদের পরিশ্রম দিয়ে।

ট্রাম্প সম্প্রতি যে নির্দেশিকায় সই করেছেন, তার সারমর্ম হল, 'প্রটেকশন অফ নেশন ফ্রম ফরেন টেররিস্ট এন্ট্রি ইনটু দ্য ইউনাইটেড স্টেটস'।

প্রথমে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এবিষয়ে সরকারি কোনও বিবৃতি না দেওয়া হলেও, মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই সংক্রান্ত একটি নথি ফাঁস হয়ে গেছে। সেখানেই বলা হয়েছে আগামী ১২০ দিনের মধ্যে বিশ্বের সাতটি মুসলিম প্রধান দেশ থেকে কোনও উদ্বাস্তু এবং শরণার্থীরা মার্কিন মুলুকে প্রবেশ করতে পারবে না। এরপর মার্কিন প্রশাসন খতিয়ে দেখবে কোন মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের থেকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি, তাদের ওপর আরও বেশি দিনের নিষেধাক্ষা আরোপ হতে পারে। এপ্রসঙ্গেই মালালার মত, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার সেই সমস্ত শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, যারা গত ছ বছর নিজেদের কোনও দোষ ছাড়াই পরিস্থিতির শিকার। তারাই  পক্ষপাতমূলক আচরণের সবচেয়ে বড় শিকার হল।

মালালার এপ্রসঙ্গে তার এক বন্ধু কথা উল্লেখ করে বলেন, সে সোমালিয়া, মিশর, ইয়েমেনের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে মার্কিন মুলুকে এসেছিল পড়াশোনা করতে। সেখানে গিয়ে সে তার হারিয়ে যাওয়া বোনের সঙ্গে দেখা হবে বলেও আশা করেছিল। কিন্তু ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে এক বিশাল সংখ্যক মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হল, মত মালালার।