নয়াদিল্লি: উত্তর কোরিয়া সম্পূর্ণভাবে করোনাভাইরাসের প্রকোপ মুক্ত বলে জানিয়েছেন সে দেশের পদস্থ এক স্বাস্থ্য আধিকারিক। সারা বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে সংশয়ের বাতাবরণের মধ্যেই ওই দেশের স্বাস্থ্য আধিকারিক এই দাবি করেছেন। এমনতিকেই বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন থাকা পরমাণু অস্ত্রে শক্তিধর উত্তর কোরিয়া প্রতিবেশী চিনে ভাইরাস চিহ্নিত হওয়ার পরই তড়িঘড়ি তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল। একইসঙ্গে কঠোর নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। এই প্রয়াস সম্পূর্ণ সফল হয়েছে বলে দাবি করেছেন উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় জরুরি মহামারি-প্রতিরোধ দফতরের সদর দফতরের মহামারি-প্রতিরোধ বিভাগের ডিরেক্টর পাক মিইয়োং সু।
সংবাদসংস্থাকে সু বলেছেন, এখনও পর্যন্ত আমাদের দেশের কেউ নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি। আমরা আগাম ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলাম। এই ব্যবস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে, আমাদের দেশে যাঁরা প্রবেশ করেছেন তাঁদের পর্যবেক্ষণ ও কোয়ারেন্টিনে রাখা, সমস্ত পণ্যের জীবানুমুক্ত করণ। এর পাশাপাশি সীমান্ত বন্ধ করা এবং আকাশ ও সমুদ্র পথও বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বুধবার জানিয়েছে, সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১০ লক্ষ।
চিনের পাশাপাশি আর যে দেশগুলিতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ আগেভাগে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াও।
উত্তর কোরিয়ার মেডিক্যাল সিস্টেম একেবারেই ভালো নয়। এই অবস্থায় ভাইরাসের সংক্রমণ সে দেশের পক্ষে অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার দেশত্যাগীরা অবশ্য পিয়ং ইয়ংয়ের বিরুদ্ধে প্রাদুর্ভাব চেপে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
উত্তর কোরিয়ায় যে করোনা সংক্রমণ ঘটেছে, তা নিয়ে তিনি কার্যত নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন সামরিক বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল রবার্ট আব্রামস।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়া কিছু ঘটছে এবং মহামারি-প্রতিরোধে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়ে সে দেশের নেতা কিম জং উন-কে ব্যক্তিগত চিঠিও দিয়েছেন।
পরমাণু অস্ত্র ও ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচীর জন্য পিয়ং ইয়ংয়ের ওপর ইতিমধ্যেই রয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা। তারা ভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত সহায়তা চেয়েছে। রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রক গত ফেব্রুয়ারিতে জানায় যে, উত্তর কোরিয়ার অনুরোধে তারা দেড় হাজার করোনভাইরাস ডায়গনোস্টিক টেস্ট কিট সরবরাহ করেছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকির পরিপ্রেক্ষিতে এই সামগ্রী চেয়েছিল উত্তর কোরিয়া।
টেস্ট কিট, ফেস মাস্ক, প্রোটেকটিভ সরঞ্জাম ও জীবানুনাশকের মতো সামগ্রীর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ ইউনিসেফ ও অন্য ত্রাণ সংগঠনগুলির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দিয়েছিল। ওই সব সামগ্রী উত্তর কোরিয়ায় সরবরাহ করা হয়েছে কিনা, তা অবশ্য জানা যায়নি। সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, এ ব্যাপারে ওই সংস্থাগুলির কাছ থেকেও প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি।
ইউএন অফিস ফর দ্য কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স ওয়েবসাইটে পোস্ট করা তথ্য অনুযায়ী, হু পিয়ং ইয়ংয়ের করোনাভাইরাস মোকাবিলা সংক্রান্ত কার্যাবলির জন্য ৯ লক্ষ মার্কিন ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছে।