লাহৌর: যত সময় যাচ্ছে ততই ঘোরাল হয়ে উঠছে অপশাসন এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট তা নিয়ে পাকিস্তানে (Pakistan Politics) রাজনৈতিক তরজা এ বার চরমে উঠল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের (Imran Khan) বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরা। মঙ্গলবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি সেক্রেট্যারিয়টে গিয়ে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব (No Confidence Motion) জমা দিলেন বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিরা। তাতে সামিল ছিলেন রানা সানাউল্লা, আয়াজ সাদিক, শাজিয়া মারি, মরিয়ম ঔরঙ্গজেব-সহ বিরোধী শিবিরের প্রথম সারির নেতা-নেত্রীরা। 


এ দিন ইসলামাবাদে (Islamabad) অ্যাসেম্বলি সেক্রেট্যারিয়টে নিজের দফতরে অনুপস্থিত ছিলেন স্পিকার আসাদ কায়সর। তাঁর অনুপস্থিতিতেই অনাস্থা প্রস্তাবটি সেক্রেট্যারিয়টে জমা দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তান পিপলস পার্টি-র নেতা নাভিদ কামার জানিয়েছেন, ১০০-র বেশি সাংসদের স্বাক্ষর রয়েছে ওই অনাস্থা প্রস্তাবে। আইন অনুযায়ী, ৬৮ জনের স্বাক্ষর থাকলেই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি করা যেতে পারে। তাই অন্তত ভোটাভুটি করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তাঁরা।


কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবের জেরে প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের ক্ষেত্রে অন্তত ১৭২ জন সাংসদের  ভোট প্রয়োজন। তাতে বিরোধীরা কতটা সফল হবেন, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ইমরানও। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাঁ কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবেন না কেউ। বরং তাঁর সরকারের ভিত আরও মজবুত হবে। ইমরানের কথায়, ‘‘এমন ভাবে ওঁদের হারাব যে, ২০২৮-র আগে ধাক্কা সামলে উঠতে পারবেন না।’’ 


আরও পড়ুন: Russia Ukraine Crisis: ইউক্রেনে যুদ্ধের ধাক্কায় ঘরছাড়া অন্তত ২০ লক্ষ, প্রবল উদ্বেগে UN


শুধু তাই নয়, তাঁকে ক্ষমতাচ্যূত করার পরিকল্পনায় বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ইমরান। তাঁর কথায়, ‘‘অধিনা।ক কখনও নিজের কৌশল প্রকাশ করে না। আমি নিজের তরফে প্রস্তুতি সেরে রেখেছি।’’এর আগে, গত বছর মার্চ মাসে ইমরান নিজেই আস্থাভোটের আর্জি জানিয়েছিলেন। সে বার ১৭৮টি ভোট তাঁর সরকারের পক্ষে যায়। 


কোভিড-উত্তর পর্বে পাকিস্তানের অর্থনীতি কার্যত তলিয়া যাওয়ার মুখে। এমন অবস্থায় ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে অপশাসন তো বটেই, সরকারি কোষাগারের টাকা অপ্রয়োজনে খরচের অভিযোগও উঠেছে। পেট্রল-ডিজেলের শুল্ক যথাক্রমে ১০ এবং ৫ টাকা করে কমিয়ে সম্প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন ইমরান।


কিন্তু তাতেই পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। বরং তাঁর নিজের দল, পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ-এর অন্দর থেকেই ইমরানের বিরুদ্ধে একে একে বিদ্রোহী স্বর উঠে আসছে। তাতেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইমরানকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের উপায় বাতলে দিয়েছিলেন বিরোধীরা। তিনি তাতে রাজি না হওয়াতেই এ দিন তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ল। এর পিছনে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি (Asif Ali Zardari), মৌলানা ফাজলুর রহমান এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফেরও (Nawaz Sharif) ইন্ধন রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।