নয়াদিল্লি: উরি সন্ত্রাসের জেরে গোটা বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়া। তারপর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। সব কিছু মিলিয়ে হতচকিত পাকিস্তান এবার প্রকাশ্যে স্বীকার করে নিল, তাদের ভূখণ্ডই জঙ্গিদের প্রকৃত আঁতুড়ঘর। পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবার দেশের সর্বশক্তিমান সেনাবাহিনীকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিলেন।

পাকিস্তানের কোনও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারেরই কখনও সেনাবাহিনীর চোখে চোখ রাখার সাহস হয়নি। নওয়াজ শরিফকে সরিয়েই প্রাক্তন সেনা প্রধান পারভেজ মুশারফ দেশের কুর্সি দখল করেন। কিন্তু নজিরবিহীনভাবে সেই শরিফই এবার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, জৈশ ই মহম্মদ সহ পাকিস্তানে খেয়ে পরে বেড়ে ওঠা যাবতীয় জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু তাই নয়, পাঠানকোট ও ২৬/১১-র তদন্ত নতুন করে শুরু করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার গোপনে হয়েছে সেনা কর্তাদের সঙ্গে পাক সরকারের ওই বৈঠক। পরে বিদেশ সচিব আইজাজ চৌধুরি সে ব্যাপারে জানাতে গিয়ে বলেছেন, কূটনৈতিকভাবে সবরকম চেষ্টা করা সত্ত্বেও ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় একঘরে হয়ে পড়েছে। তাদের অবস্থান বারবার স্পষ্ট করা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, দুনিয়া তাতে কান দিতে রাজি নয়। এরপরেই অসামরিক সরকার সেনাবাহিনীকে পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছে, যদি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে গোয়েন্দাবিভাগের তাতে নাক না গলানোই ভাল। পাঠানকোট তদন্ত শেষ করার জন্য নতুন করে চেষ্টা করতে হবে, ২৬/১১-র বিচার ফের শুরু করতে হবে রাওয়ালপিন্ডির সন্ত্রাসবিরোধী আদালতে।

এমনকী সবাইকে অবাক করে পাক বিদেশ সচিব জানিয়েছেন, যদিও চিন পাকিস্তানের পাশে এখনও রয়েছে কিন্তু ইঙ্গিত দিয়েছে, তারাও চায়, ইসলামাবাদ জঙ্গিদের পাশ থেকে সরে আসুক। সেনার সঙ্গে বৈঠকের পর ঠিক হয়েছে, আইএসআই ডিরেক্টর জেনারেল রিজওয়ান আখতার ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসের জাঞ্জুয়া দেশের চারটি প্রদেশে ঘুরে এই সিদ্ধান্তের কথা প্রদেশ নেতৃত্ব ও আইএসআই সেক্টর কম্যান্ডারদের জানাবেন।

প্রধানমন্ত্রীর ভাই, পাক পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে আইএসআই ডিরেক্টর জেনারেলের প্রচণ্ড তর্কবিতর্ক হয়েছে বলে জানিয়েছে পাক সংবাদপত্র। শাহবাজ শরিফ সকলের সামনে আইএসআই ডিজির কাছে অভিযোগ করেন, যখনই তাঁর সরকার কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেছে, আইএসআই নাক গলিয়ে অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিয়েছে জেল থেকে। যেভাবে পাকিস্তানের শক্তিশালী গোয়েন্দা কর্তার সামনে শাহবাজ এ ব্যাপারে প্রশ্ন করেন, তাতে হতচকিত হয়ে যান সকলে।

পাশাপাশি ইসলামাবাদ এও মনে করছে, আমেরিকার সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ক্রমাবনতি হচ্ছে। যেভাবে আমেরিকা হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে, তাতে তাদের ধারণা, এই সম্পর্ক আরও খারাপ হবে।

চিন অবশ্য জানিয়েছে, তারা জৈশ প্রধান মাসুদ আজহারকে রাষ্ট্রপুঞ্জে নিষিদ্ধ করার বিরোধিতা করবে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছে, বারবার এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়ে।