কিভ: যুদ্ধ থেকে গা বাঁচিয়ে পালনোর প্রস্তাব ফিরিয়েছেন স্বামী। দুই সন্তান নিয়ে তিনিও পড়ে রয়েছেন মাটি আঁকড়েই। জানালেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির (Volodymyr Zelenskyy) স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কা (Olena Zelenska)। শুধু তাই নয়, এই যুদ্ধে (Russia Ukraine War) স্বামী, সন্তান নিয়ে তিনিও ইউক্রেনবাসীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশরক্ষায় সামিল রয়েছেন বলে জানালেন।


দক্ষিণ এবং পূর্ব দিক থেকে ইতিমধ্যেই ইউক্রেনকে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া। কিন্তু সামরিক শক্তিতে পিছিয়ে থাকলেও, রাশিয়ার সামনে মাথা নত করতে নারাজ জেলেনস্কি। তাই আমেরিকার তরফে তাঁকে নিরাপদে দেশ ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও, পত্রপাঠ তা প্রত্যাখ্যান করেন। বোমা, গুলির মধ্যেই রাস্তায় নেমে জানিয়ে দেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও মাতৃভূমিকে রক্ষা করে যাবেন তিনি।


আর তাতেই স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন ওলেনা। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে দেশের সাধারণ মানুষকে সাহস জুগিয়েছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে দেশের পতাকার ছবি পস্ট করে তিনি লেখেন, ‘আমার প্রিয় মানুষ, ইউক্রেনীয় নাগরিক। আপনাদের সকলকে দেখছি আমি। টিভিতে, রাস্তায়, নেটমাধ্যমে দেখছি। চোখে পড়ছে আপনাদের পোস্ট এবং ভিডিও। আপনারা কতটা অসাধারণ, তা জানেন কি?  আপনাদের সঙ্গে একই দেশে থাকতে পেরে গর্ববোধ করছি।’



আরও পড়ুন: Elon Musk, Starlink: ‘মঙ্গলে পরে যাবেন, আগে ইউক্রেনকে বাঁচান’, আর্তি শুনেই ত্রাতা হয়ে এলেন ইলন মাস্ক


যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে যাঁরা দেশে রয়েছেন, লড়ে যাচ্ছেন, তাঁরা শুধু ভিড় নন, বীর সৈনিক বলেও মন্তব্য করেন ওলেনা। তিনি লেখেন, ‘বলা হয়, অনেক মানুষ মাত্রেই ভিড়। আমাদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। কারণ ইউক্রেনবাসী ভিড় নন, সৈনিক। তাই আমি ভীত হব না, কাঁদব না। শান্ত থাকব, মনে রাখব আত্মবিশ্বাস। সন্তানরা আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমি ওদের পাশে থাকব, আমার স্বামীর পাশে থাকব,আপনাদের সঙ্গে থাকব।’


স্কুল জীবনের প্রেম ভোলোদিমির এবং ওলেনার। ২০০৩ সালে চার হাত এক হয় দু’জনের। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে, এক মেয়ে, এক ছেলে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রুশ সেনা ইউক্রেনে ঢুকতে শুরু করার পর থেকেই দেশের নাগরিকদের সাহস জুগিয়ে চলেছেন তিনি। কিভে মুহুর্মুহু বোমা পড়ার সময়ই ভিড়ে ঠাসা আশ্রয়স্থলে সম্প্রতি এক মহিলা সন্তান প্রসব করেন। নেটমাধ্যমে ওই শিশুর কথাও উল্লেখ করেন ওলেনা। তাঁর কথায়, ‘কিভে বোমার হাত থেকে বাঁচতে যে আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানে জন্মেছে এই শিশু। এর কিন্তু সম্পূক্ণ অন্য পরিস্থিতিতে, শান্তিপূর্ণ আকাশের নীচে জন্মানোর কথা ছিল। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের সব মনে রেখে দিতে হবে। আমরাই সৈনিক, সৈনিকদের মধ্যেই আমরা। আজ যে শিশুরা বোমার মধ্যে জন্ম নিচ্ছে, শত্রুপক্ষকে প্রতিহত করে ঘুরে দাঁড়ানো শান্তিপূর্ণ দেশে বড় হবে তারা।’



স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করলেও, লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন ওলেনা। একটি বিনোদন সংস্থাও চালান তিনি। শিশু শিক্ষা এবং শিশুদের পুষ্টি নিয়ে সমাজসেবা মূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। লিঙ্গ সাম্যের হয়েও সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।