Battle of Irpin : চারপাশে ব্যাপক গুলি-গোলা চলছে। প্রাণ বাঁচাতে যে যেখানে পারছেন পালাচ্ছেন! কিন্তু ক্রাচে ভর করে কোথাও যেতে পারেননি ইউক্রেনের (Ukraine) ইরপিন (Irpin) শহরের তাতিয়ানা! যুদ্ধ শুরুর সেই রাতের কথা কোনওদিনও ভুলবেন না তিনি! হাড়হিম করা সেই অভিজ্ঞতার কথাই এবিপি আনন্দকে জানিয়েছেন তাতিয়ানা।
যুদ্ধ সব কিছু শেষ করে দেয়। ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয় সভ্যতাকে। বুচা, বোরোডিয়াঙ্কার পরে ইরপিনও তার জ্বলন্ত প্রমাণ! ইরপিন শহরটা এখনও প্রায় জনশূন্য। গুটি কয়েক যাঁরা প্রাণ হাতে করেও এখানে রয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদেরই একজন তাতিয়ানা । পাশে রাখা ক্রাচ দু’টোই বলে দিচ্ছিল বছর আটচল্লিশের তাতিয়ানা হাঁটতে পারেন না।
ছাদ ফুঁড়ে শেল ঢুকে যায় ভিতরে
তাতিয়ানা জানালেন, ইরপিনে রুশ সেনা ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে মেয়েকে অন্যত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্রাচে ভর করে তাঁর পালানো হয়নি! আর স্ত্রী-কে এই বিপদের মুখে ফেলে যেতে পারেননি তাতিয়ানার স্বামীও। বরাত জোরে তাঁরা রক্ষা পেয়েছেন। যখন ইরপিনে লড়াই চলছিল, তখন তাতিয়ানা, ও তাঁর স্বামী বাড়ির ভিতরেই ছিলেন। তাতিয়ানা বেরোতে পারেননি। তাতিয়ানার বাড়ির আশপাশ জুড়ে রকেট ও গোলা এসে পড়ে। বাড়ির গাড়িটা পুড়ে, দুমড়ে মুচড়ে যায়। একটা শেল তাতিয়ানার বাড়ির ছাদেও গিয়ে পড়ে, যেটা ছাদ থেকে ঢুকে যায় ভিতরে। তাতিয়ানা জানান, যুদ্ধ চলাকালীন একটা মিসাইল এসে পড়ে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। চারপাশ কেঁপে ওঠে। বাড়ির সমস্ত জানালার কাচ ভেঙে যায়। রাশিয়ান ট্রুপ শহরের বাইরেই ছিল। সেখান থেকে তারা শহর লক্ষ্য করে ক্রমাগত বোমাবর্ষণ করতে থাকে।
শহরে বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই
তাতিয়ানার বাড়ির বাইরে উনুন। সেখানেই রান্না। টোমাটো সস, ক্যাপসিকাম আর রসুন দিয়ে লাল টকটকে গ্রেভি! সুন্দর গন্ধে ম ম চারপাশ! এরই মধ্যে অল্প খানিকটা আটা দিয়ে কয়েকটা রুটিও বানিয়ে ফেলছেন তাতিয়ানা। কিন্তু, উনুনে রান্না কেন? তাতিয়ানা জানালেন, ' এখন গোটা শহরে বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই। ন্যূনতম কোনও সুযোগ সুবিধা নেই। তাই আমরা এখন বাইরে উনুন পেতে খাবার রান্না করছি'
তাতিয়ানার বাড়ির কাঠামোটুকু তাও দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ইরপিন শহরের অসংখ্য বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে। প্রাণ চাইলেও ঘরে ফিরতে পারছেন না ইরপিনের অসংখ্য মানুষ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সাত-সাতটা সপ্তাহ কেটে গেছে। ইরপিনে এখন শ্মশানের শান্তি! শহরের রাস্তা জুড়ে পড়ে আছে খালি কার্তুজ...পরিত্যক্ত শেলের খোলস...ভাঙা কাচের টুকরো...আর ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরের রাশি রাশি কংক্রিটের জঞ্জাল...
তাতিয়ানার বাড়ি থেকে কিছুদূর এগোতেই সিটি কাউন্সিলের স্বেচ্ছাসেবকদের দেখা গেল, সাফাইয়ের কাজ করছেন।