কিভ: ভূ-রাজনৈতিক তাপ-উত্তাপ থেকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ (Russia Ukraine War)। তার পর এক মাস কাটতে চলল। অথচ কোনও পক্ষই হাতিয়ার ফেলতে রাজি নয়। তাই আর কোনও রাখঢাক চান না ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelenskyy)। বরং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের (Vladimir Putin) সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাৎ চান তিনি। চোখে চোখে রেখে জানতে চান, যুদ্ধে ইতি টানার কোনও সদিচ্ছা আদৌ রয়েছে কি না পুতিনের। এ ছাড়া আর কোনও উপায় নেই বলে মনে করছেন জেলেনস্কি। 


যুদ্ধের ২৬তম দিনে, সোমবার জেলেনস্কিকে উদ্ধৃত করে এমনই বার্তা তুলে ধরেছে ইউক্রেনীয় সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। তাতে জেলেনস্কির যে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে, তা হল, "প্রক্রিয়া যা-ই হোক না কেন, যুদ্ধে ইতি টানতে হলে ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজন। অন্যথায়, যুদ্ধ থামাতে রাশিয়া কতদূর এগোতে প্রস্তুত, তা জানা বোঝা সম্ভব নয় বলেই মনে হয় আমার। ওঁর সঙ্গে সমঝোতা করতে প্রস্তুত আমি। যুদ্ সমাপ্তির যদি ১ শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে, এই পদক্ষেপ করতেই হবে আমাদের। সমঝোতা এবং পুতিনের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার দিকে এগোতে হবে। সমঝোতায় না এলে, যুদ্ধে সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব নয়।"


দীর্ঘ সংঘাতের পর্ব চলাকালীন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সেনা অভিযানের নির্দেশ দেন পুতিন। তাতে রাশ টানতে আমেরিকা-সহ একাধিক পশ্চিমি দেশ তাদের গলায় নিষেধাজ্ঞার ফাঁস টেনে ধরেছে (International Sanctions on Russia)। কিন্তু তার পরেও যুদ্ধ এখনও অব্যাহত। বেলারুশ সীমান্তে এ নিয়ে দফায় দফায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হলেও, এখনও পর্যন্ত সমঝোতায় এসে পৌঁছনো যায়নি। বরং ইউক্রেনে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথা মেনে নিয়েছে রাশিয়া। 


আরও পড়ুন: Russia-Ukraine War LIVE Updates, March 22: রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থান নড়বড়ে, মন্তব্য বাইডেনের


আন্তর্জাতিক মহল এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির আবেদনে সাড়া দিয়ে এ যাবৎ দফায় দফায় মানব করিডর গড়ে ইউক্রেনে আটকে থাকা সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করার প্রচেষ্টা চললেও, দু'পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে সাময়িক যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। শুধু তাই নয়, রাশিয়া সাধারণ ইউক্রেনীয় নাগরিকদের কার্যত পণবন্দি করছে বলেও অভিযোগ কিভের। জেলেনস্কির অভিযোগ, "আমাদের নির্মূল করতেই ইউক্রেনে পা রেখেছিল রুশ সেনা।"। 


এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ (War Crime) সংক্রান্ত তদন্ত শুরুর পক্ষে সওয়াল করেছে আমেরিকা। সরাসরি পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়েছেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)। তা নিয়ে মস্কোয় রুশ রাষ্ট্রদূত জন সুলিভানকে তলবও করেছে ক্রেমলিন। যদিও জন জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা উচিত রাশিয়ার। আমেরিকার যে সমস্ত নাগরিক রাশিয়ায় আটকে রয়েছে, তাদের কাছে পৌঁছতে দিতে হবে আমেরিকার কনসুল্যারকে। 


কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ২ হাজার ২০০ নিরীহ ইউক্রেনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছেন প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষ। শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। অন্য দিকে, কিভের দাবি, যুদ্ধে ১৪ হাজার ৭০০ রুশ সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে।