সাদ্দামের ফাঁসির পর ১০ বছর কেটে গেছে। কিন্তু ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ভূত এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমেরিকাকে। মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আমেরিকার অপূর্ণ লক্ষ্যের প্রতীক যেন ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।
২০০৬-এর ৩০ ডিসেম্বর বাগদাদে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল সাদ্দামকে। সেই সময়ই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু বুশ জানতেন যে,ইরাকে আগ্রাসন আদৌ কাঙ্খিত ফল এনে দেয়নি। ততদিনে মার্কিন বাহিনীর ৩০০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বুশ তখন আরও বেশি আত্মত্যাগের কথা বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, আমেরিকানদের নিরাপত্তার স্বার্থে ইরাকের নবীন গনতন্ত্রের অগ্রগতির প্রচেষ্টায় বিরতি দেওয়া হবে না।
গণতান্ত্রিক ইরাক গঠনের যে লক্ষ্য বুশ নিয়েছিলেন তা অধরা স্বপ্নই রয়ে গিয়েছে। গোষ্ঠী সংঘর্ষে এখন দীর্ণ ইরাক। সেই সংঘাত থামাতে পারেনি আমেরিকা।
সাদ্দামের আমলে ইরাকের শাসক ছিল সংখ্যালঘু সুন্নি সম্প্রদায়। এখন শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের প্রতি তাদের বিদ্বেষ চরমপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের বাড়বাড়ন্তে মদত জুগিয়েছে। সাদ্দামের সামরিক বাহিনীর শীর্ষকর্তারা এই জঙ্গি গোষ্ঠীর মাথায় বসেছে।
হিংস্র মৌলবাদী যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে সেদেশের বাহিনীকে সাহায্য করতে এখনও ইরাকে রয়েছেন প্রায় ৫০০০ মার্কিন সেনা। ইরাকি বাহিনী এখনও নিজের ক্ষমতায় আইএসের মোকাবিলায় অক্ষম।
২০০৩-এ আগ্রাসনের সময় যে মার্কিন জনতা সোচ্চারে সমর্থন জানিয়েছিল, এখন তারাই সেই যুদ্ধের অভিঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
মার্কিন বিদেশনীতিতে চরম প্রভাব ফেলেছে ইরাক-যুদ্ধ। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে সেদেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সেই সিদ্ধান্তের পিছনে প্রভাব রয়েছে আমেরিকার ইরাক-ব্যর্থতা।
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ইস্যু ছিল ইরাক-যুদ্ধ। একটা সময় ইরাকে আগ্রাসনকে সমর্থন করেছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ভোটের প্রচারে ভোলবদলে ট্রাম্প বলতে শুরু করেন, তিনি ইরাক যুদ্ধের বিরোধী ছিলেন। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভবিষ্যতে কোনও দেশে পালাবদল বা দেশ গঠনে অংশ না নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন তাঁর প্রচার অভিযানে।