তিনি দেশ ছেড়েছেন ৪ মাস পেরিয়ে গেল। ৫ অগাস্টের পর থেকেই আমূল বদলে গিয়েছে বাংলাদেশের ছবিটা। একে একে মুছে ফেলা হয়েছে হাসিনা আমলের সব চিহ্ন। ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু মুজিবুরে মূর্তি। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত ভবন থেকে স্থাপত্য সব মুছে ফেলতে উদ্যত বাংলাদেশের চরমপন্থী নেতারা। এই পরিস্থিতিতেই বিজয় দিবস পালন। ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হল স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের দিন।


এদিনই আওয়ামী লিগ এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করল বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি। সেখানে বলা হয়েছে, ' সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি। ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামি লিগ সমগ্র পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালি জাতিকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে দেয়নি।...আওয়ামি লিগ সর্বদা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করেছে।...কিন্তু সেই বাংলাদেশ আজ কোথায়? দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশবিরোধী গোষ্ঠী অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে অগণতান্ত্রিক এই গোষ্ঠীর জনগণের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই। তারা ক্ষমতা দখল করে সকল জনকল্যাণমুখী কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে।...দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কষাঘাতে জর্জরিত দেশের মানুষ। ক্ষুধার্ত মানুষ ডাস্টবিন থেকে খাবার তুলে খাচ্ছে। এই সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে বিষোদগার করা এবং তাদের কণ্ঠরোধ করা। বিপরীতে তারা স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র-সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রচ্ছন্নভাবে মদত দিয়ে যাচ্ছে।...বাঙালি জাতির সম্মিলিত অর্জন সুমহান স্বাধীনতার মূল্যবোধকে খাটো করার অপ-তৎপরতা ধূলিসাৎ করা হবে। আর লড়াই, সংগ্রাম ও ধারণের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে সমুজ্জ্বল থাকবে বলে আমি বিশ্বাস রাখি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।' 


আর এদিনই এক্স হ্যান্ডলে বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করে পোস্ট করলেন হাসিনা-পুত্র সজীব ওয়াজেদ। হাসিনা-পুত্র লিখেছেন, 'স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে গণহত্যা চালানো যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরসূরিরা আজ অবৈধ সরকারের সান্নিধ্যে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা রাখা বয়োজ্যেষ্ঠদের শারীরিকভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বহনকারী প্রতীকগুলো বিনা বাধায় ধ্বংস করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রীয় সম্মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। পাকিস্তান এখনও ইতিহাসের অন্যতম নৃশংস গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাইতে অনীহা প্রকাশ করে চলেছে, অথচ এই অবৈধ সরকার দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তাক্ত অধ্যায়কে মুছে ফেলতে দেশকে পাকিস্তানের নিকটবর্তী করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা, পতাকা, সার্বভৌমত্ব এবং মাতৃভাষার জন্য লড়াই করা দলকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিত সহিংসতা চালানো হচ্ছে। তবে গত পাঁচ দশকে যুদ্ধাপরাধীদের সহযোগীরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে একই ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল।কিন্তু এই দেশের জনগণ সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিকে পরাজিত করেছিল।   এ বিজয় দিবসে আমার আহ্বান হল-- সব বিভেদ ভুলে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনা ধ্বংসের সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।  জয় বাংলা!'