বেজিং: জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ভারত সফরের সরাসরি বিরোধিতা না করলেও, দু দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতিকে যে চিন ভালভাবে দেখছে না, সেটা তারা বুঝিয়ে দিল। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, জোট গড়ার বদলে বিভিন্ন দেশের বোঝাপড়া বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া উচিত।

দক্ষিণ এশিয়া ও চিন সাগরে গত কয়েক বছর ধরেই আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চিন। এই পরিস্থিতিতে আবের ভারত সফরে দু দেশের মধ্যে কৌশলগত বোঝাপড়া ও সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে ১৫টি চুক্তি হয়েছে। ফলে চিনের অস্বস্তি বেড়ছে। আবের ভারত সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেছেন, ‘আমরা সবসময় আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে বিরোধের বদলে আলোচনার পক্ষে সওয়াল করি। জোট গড়ার বদলে এই দেশগুলির বোঝাপড়া বাড়ানো উচিত।’

ভারত ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী আজ ভারতে প্রথম বুলেট ট্রেনের শিলান্যাস করেছেন। ভারতকে ইউএস-২ অ্যাম্পিবায়াস এয়ারক্র্যাফট বিক্রি করার বিষয়েও সম্মত হয়েছে জাপান। এই প্রথম কোনও দেশকে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করছে জাপান। চিনও নয়াদিল্লি থেকে চেন্নাইয়ের মধ্যে উচ্চগতির ট্রেন চালানোর প্রকল্পে সামিল হওয়ার পরিকল্পনা করছে। কিন্তু তার আগেই জাপান বুলেট ট্রেনের প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়ায় বিষয়টিকে ভালভাবে নিচ্ছে না চিন। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) পাল্টা ভারত ও জাপান যে ফ্রিডম করিডরের কথা ঘোষণা করেছে, সেটা নিয়েও উদ্বিগ্ন বেজিং। যদিও মুখে সেকথা স্বীকার করতে নারাজ তারা। উল্টে ফ্রিডম করিডরকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টায় চিন। সেদেশের সরকারি সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমসে সাংহাই অ্যাকাডেমি অফ সোশ্যাল সায়েন্সেসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক হু ঝিয়ং বলেছেন, চিনের বিআরআই-এর মোকাবিলা করার জন্য ভারত-জাপান পাল্টা ফ্রিডম করিডরের উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চু ইন-এর দাবি, ভারত-জাপানের উদ্যোগ সবে শুরু হয়েছে। বিআরআই-এর সমান উচ্চতায় পৌঁছতে পারবে না ফ্রিডম করিডর।

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মধ্যে দিয়ে চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর তৈরির বিরোধিতা করে বেল্ট অ্যান্ড রোড সম্মেলন বয়কট করে ভারত। জাপানের সঙ্গে মিলে আফ্রিকা, ইরান, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরিকাঠামো তৈরি করছে ভারত। এরপর দু দেশ ফ্রিডম করিডরের কথাও ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে চিনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ইয়ে হাইলিনকে উদ্ধৃত করে গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় চিনের আধিপত্য দেখতে চায় না বলেই চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের বিরোধিতা করেছে ভারত। চিনের জন্য ঘরোয়া বাজারও খুলে দিতে রাজি নয় ভারত। তবে ভারত-জাপানের বোঝাপড়া বাড়া চিনের কাছে চিন্তার বিষয় নয়। কারণ, চিনের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল।