ওয়ারশ্ ও ওয়াশিংটন: বন্ধ হল কিক অ্যাস টোরেন্ট (ক্যাট)।


বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই বেআইনি টোরেন্ট সাইটের ‘কর্তা’ ইউক্রেনীয় বাসিন্দা আর্টেম ফাউলিনকে পোল্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। সেই সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ক্যাটের সব সার্ভার। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ফাইল। যার মধ্যে রয়েছে ছবি, গান, টিভি সিরিজ এবং ভিডিও গেমসের ডিজিটাইজড ভার্সান।

দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন মুলুকে ‘ওয়ান্টেড’ ছিলেন ৩০ বছরের ফাউলিন। তাঁর বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ দায়ের রয়েছে বিভিন্ন মার্কিন আদালতে। পাশাপাশি, ফাউলিনের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপ সহ একাধিক ফৌজদারি অভিযোগও দায়ের হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

অভিযোগ, ক্যাটের মালিক হলেন ফাউলিন। সাম্প্রতিককালে, আরেক বেআইনি টোরেন্ট সাইট ‘পাইরেট বে’-কে ছাপিয়ে বিশ্বের জনপ্রিয়তম টোরেন্ট সাইট হয়ে উঠেছিল ক্যাট। মার্কিন মুলুকে ক্যাট-এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, স্বত্ত্বাধিকার থাকা ছবি ও বিভিন্ন টিভি সিরিজকে বেআইনিভাবে নিজেদের সাইটে তুলে দেওয়া হত।

সেখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবহারকারীরা অনায়াসে সেই সমস্ত পাইরেটেড ভার্সান ডাউনলোড করত। ফলে, মার খেতেন ছবির নির্মাতারা। অথচ, কোনও ভাবেই একে রোখা যাচ্ছিল না। এর আগে, বেশ কয়েকবার ক্যাট-এর ডোমেন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। কিন্তু, কিছুদিনের মধ্যে অন্য দেশ থেকে প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমে নতুন ডোমেন লঞ্চ করে ফের সক্রিয় হয়ে উঠত ক্যাট।

তদন্তকারীদের মতে, কিক-অ্যাস টোরেন্টের মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা)। প্রতিবছর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই ১২ থেকে ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে সাইটটি। সাইটের অধিকাংশ ব্যবহারকারী হল জেন-ওয়াই। নতুন ছবির পাইরেটেড ভার্সান-এর জন্য যাদের কাছে সবচেয়ে ‘বিশ্বস্ত’ জায়গা ছিল ক্যাট।

তদন্তকারীদের অনুমান, এবার পোল্যান্ডে সাইটের সর্বময় ‘কর্তা’ ফাউলিনেক গ্রেফতার এবং প্রধান সার্ভার বন্ধ করে দেওয়ায় ক্যাট-কে চিরতরে বন্ধ করা গিয়েছে। সংবাদসংস্থা সূত্রে খবর, পোল্যান্ডে ঢোকার সময় ওয়ারশর চপিন বিমানবন্দরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ফাউলিনের জন্য ওত পেতে বসেছিলেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

কিন্তু, কী করে ফাউলিনের খোঁজ পেলেন গোয়েন্দারা? জানা গিয়েছে, এই বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনকে সাহায্য করেছে অ্যাপল এবং ফেসবুক। তদন্তকারীরা জানান, সম্প্রতি আই-পডের জন্য ইন্টারনেট থেকে বেশ কিছু গান ডাউনলোড করেন ফাউলিন। এর জন্য তিনি নিজের আই-ক্লাউড অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করেন। সেখান থেকেই তাঁর আইপি ট্র্যাকিং শুরু করে এফবিআই।

এরপর ওই একই আইপি থেকে ফেসবুকেই লগ-ইন করেন ফাউলিন। ব্যস, কেল্লা ফতে। ফাউলিনের গ্রেফতারির খবর স্বীকার করেছে মার্কিন প্রশাসন। তাঁকে পোল্যান্ড থেকে আমেরিকায় প্রত্যর্পণ করানোর চেষ্টায় এইবিআই। ইতিমধ্যেই, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু, সত্যিই কী কিক-অ্যাস টোরেন্টকে বন্ধ করা সম্ভব? প্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞদের মতে, এতটাও সহজ নয়। ইতিমধ্যেই, ক্যাট-এর একটি মিরর সাইট চালু হয়ে গিয়েছে। ‘আইএসওহান্ট’ নামের ওই সাইট ক্যাট-এর মিরর হিসেবে কাজ করছে। তারা ঘোষণা করেছে, ব্যবহারকারীরা সেখান থেকে ডাউনলোড করতে পারে। পাশাপাশি, ফাউলিনকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য দুটি পিটিশন করেছে তারা।