কিয়েভ: রাশিয়াকে প্রতিহত করতে জনে জনে নাগরিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি। এ বার লুহানস্ক শহরে ৫০ জুন রুশ দখলকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানাল ইউক্রেনীয় সেনা। তারা জানিয়েছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রুশ ট্যাঙ্ক প্রবেশ করে। সেখান থেকেই ইউক্রেনের একাধিক শহরে ক্ষপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তাতে সেনা-সহ ৪০ জন ইউক্রেনীয় নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৮ জন ওদেশার বাসিন্দা। পাল্টা আক্রমণে ৫০ জন রুশ দখলকারী মারা গিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনার হাতে।
আপাতত স্কাস্ত্যর দখল ইউক্রেনের হাতেই রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ক্রামাতর্স্ক জেলায় একটি রুশ বিমানও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে ইউক্রেনীয় সেনার দাবি। এই নিয়ে মোট ছ’টি রুশ বিমান ধ্বংস করা হল বলে জানিয়েছে তারা। ইউক্রেনীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, দক্ষিণের খেরসন অঞ্চলে তাদের তিন জন মারা গিয়েছেন। আহত হয়েছেন বহু।
রাশিয়া যদিও ইউক্রেনের দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছে। তাদের কোনও বিমান বা কামান ইউক্রেনীয় সেনা ধ্বংস করতে পারেনি বলে পাল্টা দাবি করেছে মস্কো। বরং ইউক্রেনের মাটিতে গড়ে ওঠা একাধিক বায়ুসেনা ঘাঁটি, আকাশ পথে হামলা চালানোর বিপুল অস্ত্রশস্ত্র এবং সরঞ্জাম ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তাদের।
ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রকের ডেপুটি মন্ত্রী অ্যান্টন গেরাশ্চেঙ্কো অবশ্য রুশ হামলার কথা মেনে নিয়েছেন। জানিয়েছেন, রুশ সেনার ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভ, খারকভ এবং নিয়েপেরে তাঁদের সেনাবাহিনীর সদর দফতর, গুদামে আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলেও জানা গিয়েছে। রাজধানীর মূল বিমানবন্দরের বাইরে গোলাগুলিও শুরু হয়েছে বলে খবর উঠে এসেছে।
রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে যখন উদ্বেগে গোটা বিশ্ব, সেই সময়ই বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের মাটিতে বিশেষ সেনা অভিযানের ঘোষণা করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার পরই ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে সংঘর্ষ কার্যতই যুদ্ধের আকার ধারণ করে। ইউক্রেনের একাধিক শহরকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে রাশিয়া। তার পাল্টা নাগরিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি।
বিগত দু'মাসেরও বেশি সময় ধরে রাশিয়া এবং ইউউক্রেনের মধ্যে চরং সংঘাত চলছিল, কূটনৈতিক আলোচনা, আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপেও যার সমাধান সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতির জন্য আমেরিকা এবং ব্রিটেনের মতো দেশকে দুষছে রাশিয়া। ইউক্রেনকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করে চারিদিক থেকে রাশিয়াকে ঘিরে ফেলার প্রচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন পুতিন। আমেরিকার তরফে এই নিয়ে বার বার রাশিয়াকে কাঠগড়ায় তোলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে সম্প্রসারবাদের অভিযোগ তোলা হয়। শুরুতে আমেরিকার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ইউক্রেনও। সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার রাস্তায় হাঁটতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু লাগাতার টানাপোড়েনে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।