কিয়েভ: ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ থেকে একটু দূরের এক হোটেল। সারি দিয়ে শুয়ে রয়েছে ৫১টি সদ্যোজাত। কাঁদছে, খেলছে আপন খেয়ালে। যেরকম দৃশ্য সচরাচর দেখা যায় বিশ্বের যে কোনও হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে।


তবে কিয়েভের হোটেলে থাকা সদ্যোজাতদের বিশেষত্ব হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই সারোগেট মায়ের সন্তান। অর্থাৎ, সন্তানধারণে অক্ষম মায়েরা অন্য মহিলার গর্ভ ভাড়া নিয়ে নিজেদের সন্তানের জন্ম দেন যে পদ্ধতিতে। কিয়েভের সদ্যোজাতদের কারও গন্তব্য আমেরিকা, কারও হয়তো ইউরোপের কোনও দেশ। তবে করোনা আবহে তাঁদের সামাজিক অভিভাবকের কোলে পৌঁছনো আটকে রয়েছে। লকডাউনে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এক শহর থেকে অন্যত্র যাওয়াই দুষ্কর। আর এ তো এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি!

ইউক্রেনে গত মার্চ মাস থেকে বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে। তাই বাবা-মায়েরা তাঁদের সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তানদের গ্রহণ করতে পারেননি। শুধু ভিডিও কলে দেখতেই পেয়েছেন।

রাফা আইরেসের অভিজ্ঞতা আবার অন্যরকম। স্পেনের এই ভদ্রলোক কিয়েভে পৌঁছে নিজের কন্যাসন্তান মার্তাকে নিয়েছেন। কিন্তু লকডাউনে সেখানেই আটকে পড়েছেন। ফিরতে পারেননি নিজের দেশে। তাঁর স্ত্রী মারিয়া ব্যক্তিগত কাজে আটকে পড়ে কিয়েভে যেতে পারেননি। কন্যাসন্তানকে কোলে নেওয়ার অপেক্ষা আরও বেড়ে গিয়েছে তাঁর। রাফা বলেছেন, ‘স্ত্রী যাতে মেয়েকে দেখতে পায়, তার জন্য এক-দেড় ঘণ্টা ধরে ভিডিও কল করি রোজ। তবে হোটেলকর্মীরা চমৎকার। ওঁদের জন্যই সবকিছু স্বাভাবিক থাকছে।’

কবে সমস্যার সমাধান হবে? কবে বাড়ি ফিরতে পারবে সদ্যোজাতরা? ইউক্রেন প্রশাসন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস থেকে অনুরোধ পেলে তবেই অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

কিয়েভের যে হোটেলে রাখা হয়েছে সদ্যোজাতদের, সেটির নাম হোটেল ভেনিস। হোটেলটি বায়োটেক্সকম ক্লিনিকের। যে ক্লিনিক সারোগেসি মারফত সন্তানধারণের ব্যবস্থা দেয় বাবা-মায়েদের। তারা ৫১ শিশুর একটি ভিডিও পোস্ট করে ইউক্রেন সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে। যদিও তাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনের ওম্বাডসম্যান লুডমিলা ডেনিসোভা জানিয়েছেন, শিশুদের ভিডিও দিয়ে ঠিক করেনি ওই ক্লিনিক। তাঁর অভিযোগ, এটাকে বিজ্ঞাপন হিসাবে তুলে ধরছে ওই ক্লিনিক। তিনি দাবি তুলেছেন, শুধু ইউক্রেনের বাসিন্দাদেরই নিজেদের দেশের সারোগেসি পদ্ধতির সুবিধা পাওয়া উচিত।

এই টানাপোড়েনে ঝুলে রয়েছে ৫১ শিশুর ভাগ্য। মা-বাবার কোলে যাওয়ার অপেক্ষায় সদ্যোজাতরা।