মেরিল্যান্ড:  দেওয়ালের গায়ে থরে থরে সাজানো খাঁচা। তার মধ্যে কিলবিল করছে সাপের দল (Caged Snakes)। সামনে মেঝেয় পড়ে রয়েছে গৃহকর্তার নিথর দেহ। প্রতিবেশির খোঁজ নিতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখে কার্যত মুর্ছা যাওয়ার জোগাড় হল স্থানীয়দের। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে গিয়েছে। খাঁচা খালি করে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১২৫টি সাপকেও। কিন্তু তা-ও স্বস্তি পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। বরং চোখের সামনে গোটা দৃশ্য ভেসে উঠলেই ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে শিরদাঁড়ায়।


আমেরিকার (US News) মেরিল্যান্ডের চার্লস কাউন্টির ঘটনা (Maryland Man Found Dead)। বুধবার সেখানকার একটি বাড়ি থেকে গৃহকর্তা, ৪৯ বছরের ডেভিড রিস্টনের নিথর দেহ উদ্ধার হয়। আর ওই বাড়িতেই বিষধর, বিষহীন মিলিয়ে খাঁচাবন্দি ১২৫টি সাপ উদ্ধার হয়, যার মধ্যে ছিল অতি বিষধর  র‍্যাটল স্নেক, ব্ল্যাক মাম্বা এবং স্পিটিং র‌্যাটল স্নেক, কোবরা সাপও, স্পিটিং কোবরা আত্মরক্ষার্থে বিষদাঁত থেকে তীক্ষ্ণ ভাবে বিষ নিক্ষেপ করতে পারে। কোনও ভবে সেই বিষের ছিটে চোখে লাগলে চিরকালে মতো দৃষ্টিশক্তি হারান মানুষ। এ ছাড়াও ওই বাড়ি থেকে ১৪ ফুট লম্বা হলুদ রংয়ের একটি বার্মিজ পাইথন উদ্ধার হয়েছে।  


বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকলেও, গোটা দিন ডেভিডকে দেখতে পাননি তাঁর প্রতিবেশি। বাড়ির ভিতর থেকে কোনও সাড়াশব্দও মিলছিল না। তাই রাতের দিকে জানলা দিয়ে ডেভিডের বাড়ির ভিতরের অংশ দেখার চেষ্টা করছিলেন ওই প্রতিবেশি। তখনই জানলার ফাঁক দিয়ে ডেভিডকে মেঝেয় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে আপদকালীন নম্বর ডায়াল করে পুলিশকে গোটা বিষয়টি জানান তিনি। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশ এবং দমকলবাহিনী। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, মেঝেয় পড়ে রয়েছেন ডেভিড। আর ঘরের চারিদিকে সাজানো খাঁচায় কিলবিল করছে সাপ।



আরও পড়ুন: US-China Conflict: কোভিড বিধি নিয়ে বাড়াবাড়ির অভিযোগ, চিনগামী ৪৪ উড়ান বাতিল আমেরিকার


ঘটনাস্থলেই ডেভিডকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তার পর তাঁর দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় বাল্টিমোরের মুখ্য চিকিৎসা পর্যবেক্ষকের কাছে। তার পর বিশেষজ্ঞের দল ডেকে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত একে একে খাঁচা খুলে বার করে আনা হয় সাপগুলিকে। চার্লস কাউন্টির পশু বিভাগের মুখপাত্র জেনিফার হ্যারিস যদিও জানিয়েছেন, খাঁচার ভিতর অতি বিষধর এবং বিষহীন, দু’ধরনের সাপই রাখা ছিল। একই সঙ্গে স্থানীয়দের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘এলাকাবাসীকে বলব, নিশ্চিন্ত থাকুন। নিরাপত্তার সঙ্গেই রাখা হয়েছিল সাপগুলিকে। খাঁচা থেকে সাপ বেরিয়ে পড়ার কোনও ইঙ্গিত পাইনি আমরা। আপনারা আতঙ্কে রয়েছেন জানি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু মেলেনি।’’


কিন্তু জেনিফারে কথায় নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না এলাকার মানুষ। তাঁদের যুক্তি, ডেভিডের মৃত্যুর কারণ এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। সাপের দংশনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না, তা-ও এখনও খোলসা করেনি মেরিল্যান্ড পুলিশ। ওই বাড়িতে যে এত সাপ ছিল, তা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তাঁরা। হাত ফস্কে বিষধর সাপ যদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে থাকে, তাতে কী বিপদ নেমে আসতে পারে, সেই দুশ্চিন্তায় কার্যত ঘুম উড়েছে সকলের।


ওই বাড়িতে ডেভিড একাই থাকতেন বলে জানা গিয়েছে। সাপ এবং সরীসৃপ ধরার লাইসেন্সও ছিল তাঁর। কিন্তু মেরিল্যান্ডের আইন অনুযায়ী, বিষধর সাপ বাড়িতে রাখা বেআইনি। তাই কী কারণে এত সাপ বাড়িতে রেখেছিলেন তিনি, তা পরিষ্কার নয়।