নয়াদিল্লি: করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই ফাইভ জি (5G Services Row) নিয়ে টানাপড়েন। তাতে বিপর্যয়ের মুখে আমেরিকার বিমান পরিষেবা (US Flight Services)। ভারত-সহ একাধিক দেশ ইতিমধ্যেই আমেরিকাগামী বিমান বাতিল করেছে। সান ফ্রান্সিসকো, বস্টন, শিকাগো, ডালাস, মায়ামি, নেওয়ার্ক, সিয়াটল-সহ একাধিক শহরে উড়ান বাতিল করেছে বিভিন্ন দেশের উড়ান সংস্থা। শুধুমাত্র ভারতই ১৪টি আমেরিকাগামী বিমান বাতিল করেছে। আপাতত ফাইভ জি পরিষেবা চালুর সিদ্ধান্ত সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু আগামী দিনে তাদের সিদ্ধান্তের উপরই দেশের উড়ান পরিষেবা নির্ভর করছে।  


নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বুধবার আমেরিকাগামী আরও ছ’টি বিমান বাতিলের ঘোষণা করে এয়ার ইন্ডিয়া (Air India), এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ভারত থেকে যাত্রীদের আমেরিকায় ফেরত নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তিনটি বিমানের। তার আগে বুধবার যে তিনটি বিমান ছাড়ার কথা ছিল, তাতে ৭৩৪ যাত্রী টিকিট বুক করেছিলেন। আপাতত হোটেলে রাখা হয়েছে তাঁদের। আমেরিকার কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস মিললে, তবেই বোয়িং ৭৭৭ বিমানগুলির ফের চালু করা হবে বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া।


ফাইভ জি নেটওয়ার্ক (5G Internet Network) চালু হলে মার্কিন বিমান চলাচল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই ভারত-সহ একাধিক দেশ আমেরিকাগামী উড়ান বাতিল করেছে। বুধবার থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সি-ব্যান্ড ফাইভ জি পরিষেবা চালু হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই বিমানবন্দরের কাছে ফাইভ জি টাওয়ার বসানোয় বিমান ওঠানামার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে মার্কিন উড়ান সংস্থাগুলি আশঙ্কা প্রকাশ করে। সান ফ্রান্সিসকো, বস্টন, শিকাগো, ডালাস, মিয়ামি, নেওয়ার্ক, সিয়াটল-সহ একাধিক শহরে উড়ান বাতিল করেছে বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স সংস্থা। এ পর্যন্ত আমেরিকাগামী ১৪টি উড়ান বাতিল করেছে ভারত। তবে মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা জানিয়েছে, আপাতত চালু হচ্ছে না ফাইভ জি নেটওয়ার্ক।


আরও পড়ুন: Indonesia's New Capital: নেপথ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, তলিয়ে যাওয়ার আগে রাজধানী বদলের সিদ্ধান্ত ইন্দোনেশিয়ার


এয়ার ইন্ডিয়া ছাড়াও, এমিরেটস, অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ-সহ একাধিক উড়ান সংস্থা আমেরিকাগামী বিমান বাতিল করেছে। ফাইভ জি পরিষেবা বন্ধ না রাখা হলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আমেরিকা সরকারকে চিঠিও দিয়েছে ওই সংস্থাগুলি। বিমানবন্দরের রানওয়ের দু’মাইলের মধ্যে সি ব্যান্ডের বিস্তার করা যাবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেয় তারা। তার পরই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ফাইভ জি নিয়ে আপাতত পিছু হটার কথা নিশ্চিত করেন। সে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সংস্থা এটিঅ্যান্ডটি এবং ভেরাইজনও কিছু বিমানবন্দরকে ফাইভ জি-র আওতার বাইরে রাখতে তাতে সম্মত হয়েছে।


এর আগেও দু’বার ফাইভ জি পরিষেবা চালু পিছোতে হয়েছে। এ বার বুধবার থেকে আমেরিকার সর্বত্র ফাইভ জি পরিষেবা চালুর কথা ছিল। কিন্তু উড়ান সংস্থাগুলির দাবি, এতে বিমানের ওঠানামার উপর প্রভাব পড়তে পারে। যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। তাই বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে ফাইভ জি পরিষেবাকে দূরে রাখতে হবে।


বিগত কয়েক বছরে ইন্টারনেটের হাত ধরে য়ে বিশ্বায়নের জোয়ার এসেছে, তার পরবর্তী ধাপ ফাইভ জি। পরবর্তী প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে এই ফাইভ জি মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় নিমেষে কোনও কিছু ডাউনলোড এবং আপলোড করা সম্ভব। একটি মাত্র ইন্টারনেট সংযোগে একসঙ্গে একাধিক মোবাইল চালানো সম্ভব। রেডিয়ো সিগনালের উপর নির্ভর করেই এই ফাইভ জি ইন্টারনেট পরিষেবা আনা হয়েছে, যার স্পেকট্রাম সি-ব্যান্ড নামে পরিচিত।


কিন্তু যে রেডিয়ো সিগনালের উপর নির্ভর করে ফাইভ জি ইন্টারনেট পরিষেবা আনা হচ্ছে, তার ফ্রিকোয়েন্সি এবং বিমানের রেডিয়ো অল্টিমিটারের ফ্রিকোয়েন্সি পরস্পরের কাছাকাছি। রেডিয়ো অল্টিমিটারের সাহায্যে মাটি থেকে বিমানের উচ্চতা, উড়ানের নিরাপত্তা এবং ন্যভিগেশন সিস্টেমের উপর নজরদারি চালানো হয়। তাই ফাইভ জি ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হলে তার ফ্রিকোয়েন্সি বিমানের রেডিয়ো অল্টিমিটার ফ্রিকোয়েন্সির উপর প্রভাব ফেলবে এবং তাতে উড়ান পরিষেবা বিঘ্নিত হবে আশঙ্কা দাবি উড়ান সংস্থাগুলির। বিশেষ করে অবতরণের সময় বিপদ ঘটতে পারে বলে উদ্বিগ্ন তারা। সেই নিয়েই টানাপড়েন চলছে।


এর আগে, ২০২০ সালে আরটিসিএ, আমেরিকার উড়ান প্রযুক্তি সংস্থাই ফাইভ জি নিয়ে প্রথম আপত্তি জানিয়েছিল। একচুল এদিক ওদিক হলে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল তারা। সম্প্রতি আমেরিকার উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফএএ-ও ফাইভ জি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।