ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের কারাক জেলায় উন্মত্ত হিংসাশ্রয়ী জনতা হামলা চালিয়েছিল টেরি এলাকার এক হিন্দু সন্তের মন্দিরে।


এই ঘটনায় তীব্র নিন্দার ঝড় ওঠে। এবার চাপের মুখ এই হিন্দু মন্দিরের পুনঃর্নিমাণের কথা ঘোষণা করেছে ওই প্রদেশের সরকার। সেইসঙ্গে হামলাকারীদের বিরুদ্ধেও দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলিকে মন্দিরের পুনঃনির্মাণের ডাক সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন খাইবার-পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মাহমদ খান।

এরইমধ্যে মন্দিরে হামলার ঘটনায় তিন উল্লেখযোগ্য ধর্মগুরু সহ ৪৫ জনকে পাকড়াও করেছে। এই ধর্মগুরুরা মনোনীত বলে জানা গেছে। ওই মনোনীত ধর্মগুরুদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম-ফজলের স্থানীয় নেতা রেহমান সালাম খট্টাককেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত বুধবার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত বিতর্কে একদল উন্মত্ত ও হিংসাশ্রয়ী জনতা গত বুধবার শ্রী পরমহংসজী মহারাজের সমাধিতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ধর্মীয় স্থানে আক্রমণের আগে খট্টাক একটি জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন। যদিও হামলার ছক নিয়ে সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ এসেছিল স্থানীয় ধর্মগুরু মৌলানা মহম্মদ শরিফ ও মৌলানা ফৈজুল্লাহের কাছ থেকে। এই হামলার সঙ্গে যুক্তদের সন্ধানে পুলিশ বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চালায়।

এই ধর্মস্থানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ২০১৫-তে পাক সু্প্রিম কোর্ট প্রাদেশিক সরকারকে মন্দিরটি পুনর্বহাল ও পুনঃনির্মাণের নির্দেশ দিয়েছিল।

পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি-র সদস্য তথা পাকিস্তান হিন্দু কাউন্সিলের নেতা রমেশ ভানকোয়ানির আর্জির ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছিল।

মন্দিরের বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক এবং মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে টানাপোড়েনের কারণ হয়ে ওঠার পর সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছিল।

জানা গেছে, সংখ্যালঘুদের প্রার্থনাস্থলের নিরাপত্তা রক্ষা ও তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খাইবার-পাখতুনখোয়া পুলিশের জিডি সানাউল্লাহ আব্বাসি জানিয়েছেন, মন্দিরে হামলার ঘটনার এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত চলছে। এফআইআরে অনন্ত সাড়ে তিনশো জনের নাম রয়েছে।

আগামী দিনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। ভিডিও ক্লিপ ও স্থির চিত্রের সাহায্যে হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর স্থানীয় নেতৃত্ব হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। তারা বলেছে, হাতেগোনা কয়েকজনের এই অপকর্মের জন্য কারাকের বাসিন্দা সমগ্র খট্টাক উপজাতিকে দায়ী করা যায় না।

পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে উদ্যোগী হয়েছেন এবং এই ঘটনায় আগামী ৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন।