একটি নিয়মমাফিক মেডিকেল টেস্ট এত ভয়ানক প্রাণঘাতী হতে পারে তা স্বপ্নেও কেউ কল্পনা করে না। এর আগেও এই টেস্টকে ঘিরে বেশ কিছু সমস্যা হয়েছিল বলে সংবাদসূত্রে জানা গিয়েছিল। কিন্তু এবার একেবারে অজানা অচেনা কারণে প্রাণঘাতী হয়ে উঠল সামান্য সিটি স্ক্যান পরীক্ষা। ব্রাজিলের আল্টো ভেল রিজিওনাল হাসপাতালে সিটি স্ক্যানের সময় হঠাৎ তীব্র অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয় আর তার জেরেই মৃত্যু হয় মাত্র ২২ বছর বয়সী তরুণী লেটিসিয়া পলের।
মেডিকেল হিস্ট্রি অনুসারে লেটিসিয়া পল নামের এই তরুণীর চিনাবাদাম, শেলফিশ, পরাগরেণু, মৌমাছির কামড়ে অ্যালার্জির সমস্যা আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বা লক্ষণগুলিকে প্রায়ই তিনি ছোটখাটো সমস্যা বলে উড়িয়ে দিতেন। কিন্তু এবারে প্রতিক্রিয়াটি স্বাভাবিক ছিল না মোটেই। হাসপাতাল কর্মকর্তাদের মতে তাঁকে একটি কনট্রাস্ট এজেন্ট ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছিল যা সাধারণত ইমেজিং টেস্টের সময় আভ্যন্তরীণ অঙ্গ ও রক্তনালিগুলিকে হাইলাইট করার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর শরীর অ্যানাফিলাটিক শকে চলে যায় যা একটি বিরল প্রাণঘাতী অবস্থা।
চিকিৎসকেরা তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইনটিউব দিয়ে ইনটেনসিভ কেয়ারে স্থানান্তরিত করেন। ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি মারা যান। সমগ্র মেডিকেল টিমই হতবাক এই ঘটনায়। অ্যানাফিলাক্সিস বা অ্যানাফিল্যাক্টিক শক অ্যালার্জির সবথেকে বিপজ্জনক রূপগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। সাধারণ অ্যালার্জির বিপরীতে যা নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি বা হালকা ফুসকুড়ি সৃষ্টি করতে পারে। অ্যানাফিলাক্সিস কয়েক মিনিটের মধ্যেই শরীরকে গ্রাস করতে পারে।
চিনাবাদা, শেলফিস, পোকামাকড়ের কামড়, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, এমনকী রেডিওলজিতে ব্যবহৃত কনট্রাস্ট রঞ্জকের মত ট্রিগারের সংস্পর্শে এলে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম প্রচুর মাত্রায় হিস্টামিন নির্গত করে। এই রাসায়নিক পদার্থগুলি রক্তনালিকে প্রসারিত করে এবং শ্বাসনালিকে সংকুচিত করে। এর ফলে ঠোঁট ও গলা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি ভাব, রক্তচাপ হ্রাসের মত বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা যায়। চিকিৎসকেরা বলেছেন যে অনেকক্ষেত্রে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থাও দেখা দিতে পারে যাতে রোগী অজ্ঞান হয়ে যান এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করলে অবস্থা মারাত্মক হতে পারে।
সিটি স্ক্যানের সময় ব্যবহৃত কনট্রাস্ট এজেন্টের ফলে বেশিরভাগ রোগীর শরীরেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামান্য দেখা যায় যেমন বমিভাব, মুখে ধাতব স্বাদ বা শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি। তাই প্রত্যেক হাসপাতালেই এই জন্য ঝুঁকি কমাতে কনট্রাস্ট এজেন্ট দেওয়ার সময় জরুরি ওষুধ প্রস্তুত রাখে। তাৎক্ষণিকভাবে এপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন বা অ্যাড্রিনালিন ইঞ্জেকশন এই ক্ষেত্রে সবথেকে প্রথম সারির কার্যকর চিকিৎসা বলে মানা হয়। এতে দ্রুত শ্বাসনালি খুলে যায়, রক্তচাপ স্থিতিশীল করে আর চিকিৎসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় বাড়িয়ে দেয়।