নয়াদিল্লি: কুয়োর জলে কিলবিল করছে সাপ। দেওয়াল ধরে ঝুলে রইলেন মহিলা। কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টা নয়। টানা ৫৪ ঘণ্টা ওই ভাবে কুয়োর দেওয়ালের সঙ্গে সেঁটে রইলেন। শেষ পর্যন্ত জীবিত বেরিয়ে এলেন বাইরে। হলিউডের কোনও ছবির রোমহর্ষক দৃশ্য নয়, বাস্তব জীবনে এমনই ঘটনা ঘটল। (China News)

Continues below advertisement

দক্ষিণ-পূর্ব চিনের ফুজিয়ান প্রদেশের কুয়াংঝৌ থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর হাঁটতে বেরিয়েছিলেন ৪৮ বছর বয়সি ওই মহিলা। হাঁটতে হাঁটতে জঙ্গলের রাস্তা ধরেন। সেই সময় অসাবধানতাবশত পড়ে যান একটি গভীর কুয়োর মধ্যে। (Viral News)

অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনি না ফেরায়, বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। আশেপাশে, আত্মীয়দের বাড়ি, কোথাওই পাওয়া যায়নি ওই মহিলাকে। এমতাবস্থায় ১৪ সেপ্টেম্বর থানায় অভিযোগ দায়ের করান পরিবারের সদস্যরা। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে জোরকদমে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। কিন্তু ওই মহিলার চিহ্ন পর্যন্ত মেলেনি।

Continues below advertisement

কোনও উপায় না দেখে, শেষ চেষ্টা হিসেবে Blue Sky Emergency Rescue Centre-এর দ্বারস্থ হন মহিলার ছেলে। আকাশপথে নজরদারি চালানোয় সুখ্যাতি রয়েছে Blue Sky Emergency Rescue Centre-এর। 

ওই সংস্থার ১০ জনের টিম এর পর কাজে নামে। থার্মাল ইমেজিং ড্রোন উড়িয়ে খোঁজ শুরু হয় নিখোঁজ ওই মহিলার। ১০ জনের টিমে ছিলেন ক্যাপ্চেন Du Xiaohang. তল্লাশি অভিযান চলাকালীন দুপুর ১টা বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ কান্নার শব্দ কানে আসে তাঁর। সেই কান্না অনুসরণ করে ওড়ানো হয় ড্রোন। আর তাতেই ঝোপঝাড় পেরিয়ে কুয়োর মধ্যে মহিলাকে দেখতে পাওয়া যায় মহিলাকে।

উদ্ধারকারীরা দেখেন, কুয়োর মধ্যে অর্ধেক শরীর ডুবে রয়েছে মহিলার। সিক্ত হাতে কোনও রকমে দেওয়ালের একটি ফাটলে হাত ঢুকিয়ে ধরে ঝুলে রয়েছেন। এর পর যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওই মহিলাকে উদ্ধার করে আনার কাজ শুরু হয়। দড়ি ঝুলিয়ে কুয়োর ভিতর থেকে তুলে আনা হয় তাঁকে। কুয়ো থেকে বেরিয়ে আসার পর যে কাহিনি শুনিয়েছেন ওই মহিলা, তাতে শিউরে উঠছেন সকলে।

ওই মহিলা জানিয়েছেন, অসাবধানতাবশত কুয়োর মধ্যে পড়ে যান তিনি। সাঁতার কাটতে জানতেন বলে শরীর ভাসিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। হাত বাড়িয়ে দেওয়ালের একটি ইঁটও ধরতে সফল হন। কিন্তু কুয়োটির আকার একেবারে অন্যরকম ছিল। নীচের অংশ চওড়া, উপরের অংশ সঙ্কীর্ণ। দেওয়াল বেয়ে উপরে ওঠার শক্তিও ছিল না তাঁর শরীরে। সেই অবস্থায় একহাতে দেওয়ালে দাঁত বের করে থাকা ইঁট ধরেন, অন্য হাত দিয়ে আরও ইঁট সরিয়ে ফাটল চওড়া করছিলেন, যাতে পা-ও রাখতে পারেন। ওই ভাবে দু’দিন কেটে যায় কুয়োর মধ্যে। 

সংবাদমাধ্যমে ওই মহিলা বলেন, “প্রতি মুহূর্তে মনোবল হারাচ্ছিলাম। কুয়োর নীচটা পুরো অন্ধকার ছিল। গোটা শরীরে হুল ফোটাচ্ছিল মশা। শুধু তাই নয়, কুয়োর জলে জলঢোঁড়া সাপ ঘুরছিল। একটি সাপ হাতে কামড়েও দেয় আমাকে। বিষ ছিল না বলে রক্ষে পাই। বার বার মনে হচ্ছিল এবার হাল ছেড়ে দিই। কিন্তু ৭০ বছরের মা, ৮০ বছরের বাবা, সদ্য কলেজে পা রাখা মেয়ের কথা মনে পড়ছিল। ওদের কী হবে ভেবে কিনারা করতে পারছিলাম না। ওদের কথা ভেবেই ৫৪ ঘণ্টা ওই নিদারুণ যন্ত্রণা সহ্য করি পেরেছি।”

কুয়ো থেকে উদ্ধারের পরই ওই মহিলাকে জিনজিয়াং সিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আবার তাঁকে পাঠানো হয় কুয়ানঝৌ ফার্স্ট হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মহিলার পাঁজরের দু’টি হাড়ে চিড় ধরেছে। ফুসফুস খানিকটা প্রভাবিত হয়েছে তাঁর। চোট লেগেছে হাতে। অত ক্ষণ ঝুলে থাকায় আলসারেশনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে এখন অবস্থা স্থিতিশীল তাঁর।