নয়াদিল্লি: দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত। পেশায় বিজ্ঞানী হলেও কোনও আবিষ্কারের জন্য নয়, বরং বিরল রোগী হিসেবে খবরের শিরোনামে উঠে এলেন দেবেন্দ্র বরলেওয়ার। কারণ পাঁচ-পাঁচটি কিডনি নিয়ে বেঁচে রয়েছেন তিনি। জন্মে থেকেই নয় যদিও, বরং বার বার প্রতিস্থাপন ব্যর্থ হওয়ার খেসারত দিতে হয় তাঁকে। (DRDO Scientist Has 5 Kidneys)
হরিয়ানার ফরিদাবাদের বাসিন্দা দেবেন্দ্রর বয়স ৪৭ বছর। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষা গবেষণা কেন্দ্র DRDO-তে কর্মরত তিনি। গত ৮ জানুয়ারি ফরিদাবাদের অমৃতা হাসপাতালে চার ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে তাঁর। নতুন করে কিডনি প্রতিস্থাপন হয়। আর তাতেই তাঁর শরীরে কিডনির সংখ্যা বেড়ে পাঁচটি হল। (Kidney Transplant)
অমৃতা হাসপাতালে তৃতীয় বার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দেবেন্দ্রর শরীরে। তাই এবারের অস্ত্রোপচার বেশ জটিলও ছিল। চিকিৎসকরা দেবেন্দ্রর ঘটনাকে বিরল হিসেবেই গণ্য করছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি হলই বা কেন? এর নেপথ্য়ে ভয়ঙ্কর কাহিনি রয়েছে। (Viral News)
জানা গিয়েছে, দু’টি কিডনি নিয়েই জন্মেছিলেন দেবেন্দ্র। কিন্তু ১৫ বছর বয়সেই কিডনির সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। হাইপার টেনশন থেকে সমস্যা আরও গুরুতর হয়। ২০১০ সালে, প্রথম বার একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় দেবেন্দ্রর শরীরে। কিন্তু সেই প্রতিস্থাপন সফল হয়নি। ফলে দ্বিতীয়বার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় ২০১২ সালে। কিন্তু কোভিডে সংক্রমিত হলে ২০২২ সালে সেই কিডনিও বিকল হয়ে যায়।
এর ফলে সম্প্রতি ফের, তৃতীয় বার কিডনি প্রতিস্থাপন হয় দেবেন্দ্রর শরীরে। আগে থেকেই চার-চারটি কিডনি ছিল দেবেন্দ্রর শরীরে। তাই এবার বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেন চিকিৎসকরা। উন্নত যন্ত্রপাতির সাহায্য়ে নতুন একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর শরীরে।
চিকিৎসক অনিল শর্মা, আহমেদ কামাল, সমীর ভাটে, কুণাল রাজ গাঁধী মিলে দেবেন্দ্রর শরীরে পঞ্চম কিডনিটি প্রতিস্থাপন করেন। অস্ত্রোপচাপরের দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাঁর শরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। ১০ দিনে ছাড়া পেয়ে যান হাসপাতাল থেকে। এখন ডায়লিসিসেরও প্রয়োজন পড়ছে না তাঁর।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে কালঘাম ছুয়ে যায় তাঁদের। এমনিতে দেবেন্দ্রের চেহারা রোগা-পাতলা, তার উপর আগে থেকে চার কিডনি রয়েছে শরীরে। নতুন কিডনির জন্য জায়গা সঙ্কুলান করতে গিয়েও হিমশিম খেতে হয়। এই কিডনিটিকে শরীর যাতে প্রত্যাখ্যান না করে, তার জন্য দেবেন্দ্রর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অপটিমাইজ করা হয়।
সংবাদমাধ্যমে দেবেন্দ্র বলেন, “দু’-দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপন ব্যর্থ হওয়ার পর লড়াই খুব কঠিন ছিল। ডায়লিসিসের উপর জীবন নির্ভর হয়ে পড়েছিল আমার। অমৃতা হাসপাতালের চিকিৎসকরা নতুন জীবন দিয়েছেন আমাকে। এত জটিল অস্ত্রোপচার কেউ নিতেই রাজি হতেন না। এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি আমি। শরীরও আগের থেকে ভাল। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।”