নয়াদিল্লি: বেশি খেয়ে ফেলে অসুস্থ তরুণী। কিছুতেই স্বস্তি না পেয়ে, ভর্তি হলেন হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে যা হল, তার জন্য প্রস্তূত ছিলেন না কেউই, না অসুস্থ হয়ে পড়া তরুণী, না হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কারণ রোগের শুশ্রূষা করতে গিয়ে তরুণীর পেট কাটতে হল চিকিৎসকদের। আর তাতেই পেটের মধ্যে জমে থাকা পাঁচ কেজি অপাচ্য খাবারের মণ্ড বেরিয়ে এল। (Viral News)


চিনের জিয়াংসু থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। Sing Tao Daily জানিয়েছে, ৪১ বছর বয়সি যুবতী ঝাংয়ের বেশি খেয়ে ফেলার অভ্যাস বরাবরই। আচমকা তলপেটের অংশ ফুলতে শুরু করে তাঁর। তিনি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। কিন্তু এর পর মাসখানেক সময় ধরে অস্বস্তি বাড়তে থাকে। পেটে ব্যথাও শুরু হয়। তাতেও যদিও খাওয়াদাওয়ায় কোনও বিরতি নেননি ঝাং। (China News)


এর দু'সপ্তাহ পর পরিস্থিতির অবনতি হয়। উদর আরও স্ফীত হতে থাকে, সেই সঙ্গে ঘন ঘন বমি। এমন পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই শ্রেয় বলে মনে হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগেও গোটা একটি খেজুরের কেক খেয়েছিলেন ওই তরুণী। এর ফলে যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায় তাঁর। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে ওই যুবতীর অগ্ন্যাশয় ফুলে গিয়েছে বলে মনে হয় চিকিৎসকদের। সেই মতো জরুরি বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয় যুবতীকে। 


কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ওই হাসপাতালের শাখা Hospital of Nantong University-র ICU-তে যতক্ষণে ভর্তি করা হয়, তত ক্ষণে কোমায় চলে গিয়েছেন ওই তরুণী। সেই অবস্থাতেই পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে। আর তাতে দেখা যায়, যুবতীর পেটে গ্রহণীতন্ত্রে সমস্যার জেরেই পেট ফুলে গিয়েছে। গ্যাসট্রিক থেকেই পেট অস্বাভাবিক ফুলে গিয়েছে তাঁর। দেখা  যায়, অতিরিক্ত চাপের ফলে গ্যাসট্রিক ওয়াল নেক্রোসিস 


অতিরিক্ত টানাপোড়েনের ফলে পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক ওয়াল নেক্রোসিসে ছিদ্র তৈরি হয়েছে। সেই ছিদ্র দিয়ে বিভিন্ন উপাদান গিয়ে জমা হচ্ছিল তলপেটে। হাসপাতালের চিকিৎসক Guo Qingsong জানান, সেপটিক শক থেকে কিডনি ফেলিওর হওয়ার উপক্রম হয়। যে কোনও মুহূর্তে মাল্টিপল অর্গ্যান ফেলিওর হতে পারত যুবতীর। হাসপাতালেও তরুণীর ভাইটাল প্যারামিটার্স স্থিতিশীল ছিল না। শুধু ওষুধে কাজ হচ্ছিল না একেবারেই। ফলে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।


সেই মতো অস্ত্রোপচার শুরু হয়। তরুণীর পেট থেকে পাঁচ কেজির বেশি খাবার বের করেন চিকিৎসকরা, হজম না হয়ে যেগুলি জমা হয়ে পড়েছিল। আচার থেকে অঙ্কুর যুক্ত কড়াই, অপাচ্য খাবারের মণ্ডে সবকিছুই ছিল। পাশাপাশি একাধিক গ্যাসট্রিক স্টোনও বের করা হয়, যার এক একটির আয়তন ছিল ৬ সেন্টিমিটার। রোগ যেহেতু গুরুতর, তাই অস্ত্রোপচার করে তাঁর গোটা পাকস্থলীই বাদ দিতে হয়।


সেখানেই কাজ শেষ হয়নি। বরং জটিল অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। ওই যুবতীর বিপাকতন্ত্রকে পুনরায় গঠন করা হয়। খাদ্যনালীকে সরাসরি সংযুক্ত করা হয় ক্ষুদ্রান্ত্রের সঙ্গে, যাতে সরাসরি খাবার বেরিয়ে যেতে পারে। ছ'ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। এর পর ICU-তে রাখা হয় ঝাংকে। সেখানে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন তিনি। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন ওই যুবতী, তার পর ছাড়া পান হাসপাতাল থেকে।