নয়াদিল্লি: শেষকৃত্যের খরচ জোগাড়ে অসমর্থ। আলমারিতে বাবার দেহ লুকিয়ে রাখলেন ছেলে। একদিন বা দু’দিন নয়, টানা দু’বছর জামাকাপড়ের আলমারিতে রইল মৃতদেহ। পচে গলে শেষে কঙ্কালে পরিণত হল দেহ। পুলিশের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সামনে এল, যাকে ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। (Viral News)
জাপানের টোকিও থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। South China Morning Post জানিয়েছে, অভিযুক্তের নাম নবুহিকো সুজুকি, বয়স ৫৬ বছর। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর বাবা মারা যান। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। বাবার শেষকৃত্যের খরচ জোগাড় করতে পারেননি। বাবার দেহ আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখেন তিনি। (Japan News)
এতদিন কেউই বিষয়টি টের পাননি। কিন্তু টোকিওতে একটি রেস্তরাঁ চালান নবুহিকো। সম্প্রতি টানা এক সপ্তাহের মতো বন্ধ ছিল রেস্তরাঁ। রেস্তরাঁ বন্ধ রাখার কথা কাউকে জানাননি নবুহিকো। ফলে আশেপাশের সকলের সন্দেহ হয়। সেই মতো পুলিশকে বিষয়টি জানান তাঁরা।
নবুহিকোর কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। সেই মতো তাঁর বাড়িতে খোঁজ নিতে যায় পুলিশ। আর তাতেই আলমারির ভিতরে রাখা কঙ্কালটির খোঁজ মেলে। নবুহিকোকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে আসল ঘটনা খোলসা করেন তিনি।
নবুহিকো জানিয়েছেন, ৮৩ বছর বয়সি বাবা আচমকাই মারা যান। বাড়ি ফিরে বাবার মৃতদেহ দেখতে পান তিনি। কিন্তু শেষকৃত্যের যা খরচ, তা তাঁর পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। তাই দেহটি আলমারিতে লুকিয়ে ফেলেন নবুহিকো। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে অপরাধ বোধে ভুগলেও, পরে বিষয়টি সয়ে যায় তাঁর। এমনকি বাবাকেই একটা সময় তিনি দোষারোপ করতে শুরু করেন বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ।
নবুহিকোকে নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে দেশের সোশ্যাল মিডিয়ায়। কারণ পুলিশে তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে বাবার পেনশনের টাকা নয়ছয় করার বিষয়টিও উঠে এসেছে। পেনশনের টাকা হাসিল করতে তিনি বাবাকে শেষ করে দিয়েছেন কি না, প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। আবার অনেকের মতে, প্রিয়জনের চলে যাওয়া, সেই সঙ্গে আর্থিক সঙ্কট, অনেক সময় কী করণীয় বোঝা যায় না।
কিন্তু জাপানে শেষকৃত্যের খরচও যে অনেক, তাও মেনে নিয়েছেন অনেকে। একজন জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে দেহ নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য তাঁকে জোরাজুরি করতে থাকে হাসপাতাল। শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার ডলার খরচ করে তাঁকে বাবার শেষকৃত্য সারতে হয়, ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। একে প্রিয়জনের চলে যাওয়া, তার উপর আর্থিক ধাক্কা, তিনি বিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান ওই ব্যক্তি।