কলকাতা: চৈত্রের শেষ। আর কয়েকদিন পরেই নতুন বাংলা বছর। পুরনো বছরের সব ক্লান্তি, মলিনতা ধুয়ে ফেলে তবেই নতুন বছর শুরু করা উচিত। আর সেটা করতে গেলে ঘুরতে যাওয়ার চেয়ে ভাল কাজ আর কিছুই নেই। চৈত্রের শেষেই বাংলা তাপপ্রবাহ চলছে। আরও কদিন যে এই গরমের থেকে নিস্তার নেই সেটাও জানিয়ে দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। বৈশাখ মাসেও যে তীব্র রোদের তাপে পুড়তে হবে সেটাও জানা। তাই নতুন বছরের মুখে কিছু হিল স্টেশনে ঘুরে এলে মন্দ হয় না। কয়েকদিন ছুটি জোগাড় করে নিলেই হল। কিন্তু কোথায় যাওয়া যায়? রইল কয়েকটি জায়গার তালিকা।



সিমলা:
আজ নয়, ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতের অন্যতম পছন্দের হিল স্টেশন হিমাচল প্রদেশের সিমলা। ভারতের তীব্র গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে এখানেই ঘাঁটি গাড়তেন ব্রিটিশরা। সেই যুগ চলে গিয়েছে, কিন্তু পছন্দ এখনও একই রয়েছে। 


টয়ট্রেনে চেপে সিমলা যাওয়া এখানকার অন্যতম পছন্দের বাহন। তবে টিকিট পাওয়ার বিষয়টি রয়েছে। লাগবে সময়ও। সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর চন্ডীগড়। এছাড়া দিল্লি থেকে বহু বাস রয়েছে যা সরাসরি পৌঁছে দেবে সিমলা। একটু বেশি রেস্ত থাকলে প্রাইভেট গাড়িও ভাড়া করা যায়। 


সিমলার ম্যালে ঘোরাঘুরি, শপিং তো রয়েইছে। তারই সঙ্গে বহু ঘোরার জায়গা রয়েছে। তাতাপানির জলপ্রপাত, ক্রাইস্ট চার্চ, জাখু হনুমান মন্দিরে ট্রেক করে ওঠা যায়। চারপাশে ব্রিটিশ স্থাপত্য চোখ ভরে উপভোগ করা যায়। কুফরি, চৈল-এ ঘুরে আসতে ভুলবেন না। 


মানালি:
হিমাচলেরই আরও একটি দ্রষ্টব্য মানালি। বড়সড় ট্যুর হলে সিমলা-মানালি দুটোও অনেকে সেরে নেন। তবে সময় অল্প হলে আলাদা করে মানালি যাওয়াই যায়। চারপাশে তুষারশুভ্র পর্বতের মাঝে সবুজে মোড়া পাহাড়ি শহর। 


চন্ডীগড় বা দিল্লি থেকে সহজেই বাসে যাওয়া যায় মানালি চাইলে গাড়িও ভাড়া করে যেতে পারেন।


হাদিম্বা মন্দির অবশ্যই যাবেন যদি মানালি আসেন। এখানেই রয়েছে নিংমাপা গোম্পা গুম্ফা। সোলাং ভ্যালি রাখতেই হবে ট্যুর প্রোগ্রামে। এখান থেকেই রোহটাং পাস যেতে পারেন। যাঁরা একটু অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাঁরা বিয়াস নদীতে ব়্যাফটিং করতে পারেন। এছাড়া একটি ট্রিপ রাখতে পারেন কুল্লু, মনিকরণ গুরুদ্বার এবং যোগিনী জলপ্রপাতের জন্য। চোখ জুড়িয়ে যাবে।


হরিদ্বার-হৃষিকেশ:
শুধুই তীর্থস্থান নয়। প্রাকৃতির সৌন্দর্যের জন্যও বছরভর উত্তরাখন্ডের এই জায়গায় আসেন বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে গঙ্গা। হরিদ্বারে ও হৃষিকেশে বহু যোগ চর্চা কেন্দ্র রয়েছে। দুটিই একেবারে পাশাপাশি।


সবচেয়ে কাছাকাছি রয়েছে দিল্লির বিমানবন্দর, রয়েছে দেহরাদূনের জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর। কলকাতা থেকে ট্রেনে সহজেই সরাসরি পৌঁছনো যায় হরিদ্বার স্টেশনে।


হরিদ্বারে একাধিক মন্দির রয়েছে। রয়েছে নানা আশ্রম। গঙ্গায় ব়্যাফটিং করা যায়। যোগচর্চা কেন্দ্র রয়েছে। 



মুন্নার:
ভারতে পাহাড় মানে কি শুধুই হিমালয়? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলে পৌঁছে যেতে হবে কেরলের মুন্নারে। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার চা বাগানে ঘেরা জনপ্রিয় একটি পর্যটন কেন্দ্র। 


কেরলের কোচি বিমানবন্দরে সারা ভারতের নানা শহর থেকেই বিমান যোগাযোগ রয়েছে। কলকাতা থেকে ট্রেনেও সহজেই চলে যাওয়া যায় এর্নাকুলাম রেল স্টেশনে। সেখান থেকে গাড়িতে বা বাসে মুন্নার।


চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যখন মুন্নারে ঢুকবেন, সবুজে সান্নিধ্য মন ও চোখ দুটোই জুড়াবে। মুন্নারে একাধিক চা বাগান রয়েছে। বাগান ও বাগানের কারখানা ঘুরে দেখতে পারেন। কীভাবে চা বানানো হয়, সেখানে হাতেনাতে দেখতে পাবেন। কুন্ডলা হ্রদ, এলিফ্যান্ট লেক অবশ্যই ঘুরবেন। নিজের আওয়াজ নিজের কানে শুনতে কেমন লাগে, জানতে গেলে অবশ্যই যেতে হবে ইকো পয়েন্টে। আর রয়েছে এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান। এছাড়াও চিথিরাপুরাম, দেবীকুলাম এবং চিন্নাকানালও ঘোরার জায়গা।



উটি:
দক্ষিণ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় হিল স্টেশন হল উটি। তামিলনাড়ুর এই হিল স্টেশনে বছরের যে কোনও সময় এখানে এলেই ভাল লাগবে। নীলগিরির কোলের এই পাহাড়ি শহর। এটাও ব্রিটিশ আমল থেকেই পরিচিত পাহাড়ি শহর। 


নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ে উটি পৌঁছনোর সবচেয়ে জনপ্রিয় রাস্তা। কোয়েম্বত্তূর বিমানবন্দর থেকে বাসে পৌঁছে যাওয়া যায় এখানে। বেঙ্গালুরু থেকেও ঘণ্টাপাঁচেকের পথ উটি।


কফি বাগান, চা বাগানে ঘুরেই কেটে যাবে দিন। রয়েছে বটানিক্যাল গার্ডেন। নীলগিরিতে টয় ট্রেন অন্যতম আকর্ষণ। এখানে গল্ফ কোর্স রয়েছে। কামারাজ ড্যাম, এমারেল্ড লেক ঘোরার জায়গা। চকোলেট অন্যতম আকর্ষণ। স্বাদ নিতে ভুলবেন না।



শিলং:
উত্তর ভারত-দক্ষিণ ভারত তো হল। কিন্তু অসীম সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে উত্তর-পূর্ব ভারতও। ইচ্ছে হলে ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে আসতে পারেন মেঘালয়ের শিলংয়ে। 


শিলং যাওয়ার জন্য সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর শিলং এয়ারপোর্ট। সবচেয়ে কাছের রেল স্টেশন গুয়াহাটি। সেখান থেকে প্রচুর বাস রয়েছে শিলং পৌঁছনোর। তবে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। 


শিলং এলেই অবশ্যই যাবেন উমিয়াম লেকে। এখানে আরও একাধিক ঝরনা রয়েছে, এলিফ্যান্ট ফলস, সুইট ফলস বাদ দেবেন না। অন্যতম আকর্ষণ লিভিং রুট ব্রিজ, কিলাং রক। এখানে ট্রেক করে গেলে অনুভূতিই অন্য। কিনশি নদীতে কায়াকিং করলেও সেটা মস্ত বড় অ্যাডভেঞ্চার।



গ্যাংটক:
বাঙালি পাহাড় ভালবাসে। আর ভিন রাজ্যের পাহাড় বললে ঘরের কাছেই গ্যাংটক। এখানে একবার কেন, বারবার যাওয়া যায়। আজ ট্রেন ধরলে কালই পাহাড়ের হাওয়ায় কাঁপতে পারবেন। 


সবচেয়ে কাছের এয়ারপোর্ট বাগডোগরা বিমানবন্দর। আর রেলস্টেশন হল নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন। কলকাতা থেকে একাধিক ট্রেন রয়েছে। এনজেপি বা বাগডোগরা নেমে শেয়ার ক্যাব বা গাড়ি ভাড়া করে চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন গ্যাংটকে।


তিস্তায় ব়্যাফটিং থেকে শুরু করে Tsomgo লেকে ইয়াকের পিঠে ঘোরাঘুরি, বাদ দেবেন না কিছুই। দেওরালি থেকে প্য়ারাগ্লাইডিং করতে পারেন। বাদ দেবেন না রুমটেক গুম্ফা। বাবা মন্দির, নাথু লা, ইয়ামথাং, জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে পূর্ব সিকিমের আরিতার-জুলুক। একাধিক ঘোরার জায়গা রয়েছে। তবে হাতে বেশ কিছুটা সময় নেবেন। গ্যাংটকে রয়েছে একাধিক জিভে জল আনা খাবারের দোকানও।


পাহাড়ে ঘোরার তালিকা করতে বসলে সেটা দীর্ঘই হতে থাকবে। শেষ হবে না। কিন্তু কিছু কিছু জায়গার নাম না বললেই নয়। সেই তালিকায় থাক ডালহৌসি, ধর্মশালা, নৈনিতাল, কাশ্মীর, লাদাখ- আরও কত কী। তাই চট করে টিকিট কেটে ঘুরে আসন পছন্দের কোনও পাহাড়ি মুলুক। ঠান্ডা হাওয়া খেলে তবেই না সইবে বৈশাখের গরম।

আরও পড়ুন:  নববর্ষের সাজে আপনিও হয়ে উঠুন নজরকাড়া, কীভাবে? জানাচ্ছেন ডিজাইনাররা