কলকাতা: ডালহৌসি ৩নং কয়লাঘাটের রাস্তা। ফুটপাথ ধরে ভাতের হোটেল। টেবিল-চেয়ার পাতা, সার দিয়ে বসে মানুষ পাত পেড়ে খাচ্ছেন। দোকান যিনি চালাচ্ছেন তিনি এখন 'ভাইরাল'। নাম মমতা গাঙ্গুলি ওরফে নন্দিনী (Viral Nandini Ganguly)। সঙ্গে বৃদ্ধ মা-বাবাও কাজ করে চলেছেন পুরো দমে। রাস্তার ধারের এই ভাতের হোটেল এখন বিখ্যাত, ইউটিউবার-ফুডব্লগারদের (Youtuber Food Blogger) নিত্য আনাগোনা। তবুও নন্দিনীর চোখে জল। কেন?


'ভাইরাল' নন্দিনী গাঙ্গুলি


ডালহৌসি চত্বরে ভাত-ডাল-সবজি-মাংসের দোকান চালান নন্দিনী। হাসিমুখে চাহিদা মেটায় একের পর এক খদ্দেরের। গত ২ বছর ধরে এই দোকান সামলাচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'আজকের তারিখে যাঁরা আমাকে চেনেন, তাঁরা আমাকে ফেমাস, স্মার্ট, কিউট নন্দিনী দি বলে চেনেন। কিন্তু এর পিছনে যে কী চলেছে, কী চলছে, সেটা কেউ হয়তো জানে না।' 


তাঁর খোঁজ পেয়েছেন ইউটিউবাররা। তাঁদের পোস্টে এখন নন্দিনী 'ভাইরাল'। কিন্তু পিছু ছাড়ছে না সমস্যা। নন্দিনী বলছেন, 'আগের থেকে অনেক বেশি রোজগার করছি, এটা ২০০ শতাংশ সত্যি। কিন্তু তার সঙ্গে একাধিক সমস্যার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে। এই দোকানটা আমার নিজের নয়। গত দুই বছর ধরে এই দোকানের পিছনে মানসিক-শারীরিক সমস্ত শ্রম দিয়ে তৈরি করেছি। সব সেভিংস দিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এই দোকানটা ভাড়ায় নেওয়া, দোকানটা ছেড়ে দিতে বলেছে। ভবিষ্যতে কী কিচ্ছু জানি না।' বলতে বলতেই কেঁদে ফেলেন নন্দিনী। 


দুই বছর আগে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন নন্দিনী। কিন্তু মা-বাবাকে নিয়ে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য ফের গুজরাতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২ জানুয়ারি ফ্লাইটের টিকিটও কাটা ছিল। কিন্তু তার আগে ২৩-২৪ ডিসেম্বর নাগাদ নন্দিনী জানতে পারেন তিনি ভাইরাল হয়ে গেছেন। 'বাংলাদেশ থেকেও এখানে এসেছেন ইউটিউবার। কিন্তু এরপর যখন নন্দিনীদিকে ভুলে যাবে সবাই, তখন আমার কী হবে? ভয় লাগে। অনেক ইউটিউবার ভাই এসে জিজ্ঞেস করে একদিন রানু দির মতো অবস্থা হলে! তখন আমি কী করব! ছোট্ট যে সম্বল একটা নিজের তৈরি করেছি, সেটাও হারিয়ে ফেলব। আজকের জন্য খুব খুশি, কিন্তু ভবিষ্যত ভেবে আমি-মা-বাবা প্রত্যেকেই আমরা কেঁদে ফেলি।'


সোশ্যাল মিডিয়ায় খ্যাতির সঙ্গে ট্রোলও যেন আপনা থেকেই চলে আসে। ট্রোলের শিকার হন নন্দিনীও। চোখের জল মুছতে মুছতেই বলেন, 'দুদিন আগে যখন ট্রোল হচ্ছিল তখন অনেকে এসেই খারাপ ব্যবহার করে গেছে। তাদের মনে হয়েছে আমি হয়তো ওরকম। আজ আমার নম্বরও ভাইরাল। আমি অর্ধেক ফোন তুলতে পারি না, কারণ ফোন করে তারা প্রশ্ন করে, "তুমি কি ঝগড়া কর"? রাত ২টোর সময় ফোন করে মানুষ বলছে, "আচ্ছা সেদিন ঝগড়াটা কেন হয়েছিল"? সোশ্যাল মিডিয়া আমরা যারা ঘাঁটি, তারা কখনও ভাবি না যে যার সঙ্গে ঘটনাটা ঘটছে, তার কী অবস্থা হচ্ছে।'


তবে এখন অন্য চিন্তায় রয়েছেন নন্দিনী। দোকান যদি ছেড়েই দিতে হয়, তাহলে নতুন কোথাও নতুন করে ব্যবসা শুরুর মূলধনটুকুও নেই তাঁর হাতে। 'আর্থিক দিক থেকে বড় শূন্য। হয়তো এখন বাড়িতে কিছুদিন ধরে ভাল মন্দ খাচ্ছি। কিন্তু নতুন কিছু শুরুর জন্য তা যথেষ্ট নয়।' 


 



আরও পড়ুন: Poulami Adhikari: আইএফএ সচিবের সঙ্গে দেখা, ময়দানের বড় ক্লাবেও কোচিংয়ের প্রস্তাব, কী ভাবছেন পৌলমী?


এই ডালহৌসির দোকান থেকে রান্না করে নিয়েই শিয়ালদা স্টেশনে প্যাকেটে করে বাবাকে খাবার বিক্রি করতেও দেখেছেন নন্দিনী। 'কিছু একটা করে এতদিন চলছিল। কিন্তু এখন যখন গোটাটা হাইলাইট হয়েছে, আমার সঙ্গে এই দোকানটাও লাইমলাইটে এসেছে। এখন তাই এই আশা নিয়েই রোজ দোকানে আসছি, কোনওদিন যদি এমন কিছু মিরাকল হয় যে আমি নিজে থেকে কিছু করতে পারছি। বা যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি আমাদের সাহায্য করতে চান, তাঁকেও হাত জোড় করে স্বাগত। নিজস্ব কিছু করতে চাই, যাতে পরবর্তীকালে কেউ এসে মাথার ছাদটা ছিনিয়ে না নিতে পারে। এটুকু আশা নিয়েই বেঁচে আছি।'