নয়াদিল্লি: ঘরের ছেলে নিখোঁজ। হইহই রব পড়ে গিয়েছিল চারিদিকে। পরিবার-পরিজন তো বটেই, হন্যে হয়ে ঘুরছিল পুলিশও। শেষ পর্যন্ত ছ’দিন পর খোঁজ মিলল যুবকের। পাহাড়-জঙ্গলের মধ্যেই ছ’দিন পড়েছিলেন ওই যুবক। খাবার, জল কিছুই মুখে দেননি ওই ছ’দিন। শেষে যখন খোঁজ মিলল, তাঁর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার কারণ জেনে হতবাক হয়ে গেলেন সকলে। জানা গেল, প্রাক্তন প্রেমিকাকে কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না। তাঁর স্মৃতি ভুলতেই জঙ্গলে প্রবেশ করেন তিনি। (Viral News)
দক্ষিণ-পূর্ব চিনের হাংঝৌয়ের ইয়ুহাং থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। সম্প্রতি হুনান পুলিশকে ফোন করেন চাংশা নামের এক যুবক। জানান, ছোট ভাই শাওলিন তিন দিন ধরে নিখোঁজ। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তাঁকে। গত ১৯ জুন শেষ বার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল। ভাইয়ের ফ্ল্যাটেও গিয়েছিলেন। মোবাইল ফোন পড়ে রয়েছে। কিন্তু ভাই নেই। (China News)
শাওলিনকে খুঁজে বের করতে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হয়। তাতে দেখা যায়, গত ২০ জুন ফ্ল্যাট থেকে হেঁটেই বেরিয়ে আসেন শাওলিন। ২১ জুন রাত ১টা নাগাদ শেষবার দালং পাহাড়ি এলাকায় তাঁকে দেখা যায়। শাওলিনকে খুঁজে বের করতে ১০০-র বেশি পুলিশ অফিসারকে নিয়ে পৃথক টিম গঠন করা হয়।
কিন্তু প্রায় চিরুণি তল্লাশি চালিয়েও কোথাও খোঁজ মিলছিল না শাওলিনের। শেষ পর্যন্ত ২৬ জুন লিনান জেলার একটি পার্কের কাছে বসানো সিসিটিভিতে তাঁর দেখা মেলে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হলে, তাদের তরফে তল্লাশি শুরু হয়। আর তাতেই শাওলিনের সন্ধান মেলে। জানা যায়, অবিন্যস্ত অবস্থায় শাওলিনকে পাওয়া যায়। পরনের জামাকাপড়ও প্রায় শতচ্ছিন্ন হওয়ার জোগাড় হয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদে শাওলিন জানান, সম্প্রতি দীর্ঘদিনের প্রেমিকার সঙ্গে ব্রেকআপ হয়ে গিয়েছে তাঁর। কিন্তু সেই যন্ত্রণা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলেন না তিনি। সর্বক্ষণ শুধু প্রাক্তনের মুখই ভেসে উঠছিল চোখের সামনে। নিজেকে সামলাতে না পেরেই ফোন বাড়িতে রেখে, খালিহাতে বেরিয়ে পড়েন। হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের দিকে এগোন। বেখেয়ালে হাঁটতে হাঁটতেই পাড়ি দেন ৪০ কিলোমিটার পথ। জঙ্গল ও পাহাড়ের মধ্যে নিজেকে কার্যত হারিয়ে ফেলেন। প্রথম তিন দিন কিছুই খাননি। পরে জলধারায় তেষ্টা মেটান, বুনো ফল পেড়ে খান। পাহাড়ের ঢালে কিছু বাড়ি রয়েছে। সেখানেও খান শাওলিন।
চিনের সোশ্যাল মিডিয়ায় শাওলিনের কাহিনি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ফোন ফেলে রেখে যে কেউ চলে যেতে পারেন, তা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। এমন প্রেম ধন্য বলে রসিকতাও করেছেন কেউ কেউ। তবে নিজের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন শাওলিন। জানিয়েছেন, বাড়ির লোকজনকে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয়, এমন হঠকারী কিছু আর করবেন না ভবিষ্যতে।