কলকাতা: সরকারি স্কুলে পড়াশোনা হয়? ইদানিং এমন প্রশ্ন প্রায়শই শোনা যায়। কিন্তু আসলে স্কুল মানে শুধুই বাড়ি-ঘর, চেয়ার-বেঞ্চ-টেবিল নয়। আসলে স্কুল তৈরি হয় পড়ুয়া আর শিক্ষকদের দিয়ে। এই কথাটাই হয়তো আবার প্রমাণিত হল তেলেঙ্গানায়। একটি সরকারি স্কুলের এক শিক্ষকের বদলি হয়েছিল। মন থেকে মেনে নিতে পারেনি পড়ুয়ারা। কিন্তু সরকারি নিয়ম বদলানো যাবে না। তাই ওই শিক্ষক যে স্কুলে যোগ দিয়েছেন, সেই স্কুলে এসেই ভর্তি হলেন আগের স্কুলের বিস্তর পড়ুয়া। 


তেলিঙ্গানার (telengana) মনচেরিয়াল জেলার পোনাকাল গ্রামের একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক জে শ্রীনিবাস। তিনি যে স্কুলে গিয়েছেন সেখানেই নতুন করে নাম লিখিয়েছেন আগের স্কুলের ১৩৩ জন পড়ুয়া। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে ওই জেলায় এডুকেশন অফিসারের বক্তব্য় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, 'এরকম খুবই কম দেখা যায়। স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে আবেগের সম্পর্ক থাকে অনেক পড়ুয়ার। তাঁরা স্কুল ছাড়লে পড়ুয়ারা আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। কিন্তু কোনও শিক্ষকের জন্য পড়ুয়ারা স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে যেখানে ওই শিক্ষক বদলি হয়েছেন সেখানে ভর্তি হয়েছেন এরকম আগে শোনা যায়নি।' 


যখন পোনাকালের স্কুলে বদলির খবর এসে পৌঁছয়। ভেঙে পড়েছিল পড়ুয়ারা। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও সরকারি নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করেননি ওই  শিক্ষক। এরপরই শিক্ষকের বদলির খবরের কথা বাবা-মায়েদের জানায় ওই পড়ুয়ারা। ওই শিক্ষক বদলি হয়েছেন ওয়ারাঙ্গল জেলাক আক্কাপালিগুডেমের একটি সরকারি স্কুলে। শেষ পর্যন্ত ওই স্কুলে গিয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় ওই পড়ুয়ারা।


১ জুলাই জে শ্রীনিবাসের বদলি ছিল। তার ২ দিনের মধ্যে পোনাকালের স্কুলের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ২৫০ পড়ুয়ার মধ্যে ১৩৩ জনের বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের নতুন স্কুলে ভর্তি করেন। সেই নতুন স্কুল ৩ কিলোমিটার দূরে। প্রতিদিন যাতায়াতের কষ্টকে আমল দিতে চাননি অভিভাবকরা এবং পড়ুয়ারা। বরং শিক্ষকের সঙ্গত্যাগ যাতে না হয় তার জন্য এই অতিরিক্ত দূরত্ব নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছেন না তাঁরা। 


টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী জে শ্রীনিবাস জানিয়েছেন, এটা আসলে তাঁর প্রতি পড়ুয়া ও অভিভাবকের ভরসার দিকটিই দেখায়। তিনি তাঁর মাধ্যমতো বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর পড়াশোনা বাচ্চারা পছন্দ করে বলে তিনি জানাচ্ছেন। তাঁর মতে এখন সরকারি স্কুলে ভাল পরিকাঠামো মিলছে, সবাইকে সেই সুযোগ নেওয়ার জন্য বলেছেন তিনি। রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে, ওই শিক্ষক শুধু পড়ানোতেই আটকে থাকতেন না। বরং পড়ুয়াদের নানা সুবিধা-অসুবিধার খোঁজ নিতেন। কোনও পড়ুয়া স্কুলে না এলে তাঁর খোঁজ করা, কারও অতিরিক্ত সময় দরকার হলে সেটা তাঁকে দেওয়া- সবটাই করেন হাসিমুখে, সেই কারণেই তাঁর উপর এত ভরসা অভিভাবকদেরও। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে। 


আরও পড়ুন: সূর্যর ক্যাচটা টার্নিং পয়েন্ট, এই বিশ্বকাপ ট্রফি গোটা দেশবাসীর: রোহিত