নয়াদিল্লি: অতল গভীরে প্রবাল উদ্যানের খোঁজেই শুরু হয়েছিল অভিযান। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরের (Pacific Ocean) গর্ভে হদিশ মিলল হারানো অতীতের। অন্তত চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা এবং ক্যামেরাবন্দি হওয়া দৃশ্য তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ প্রশান্ত মহাসাগরের নীচে নিখুঁত হাতে সাজানো ইটের নির্মাণ চোখে পড়েছে, আকারে-প্রকারে যা দেখে রাস্তা বলেই ঠাহর হয়। কালের প্রলেপে খানিকটা হলদেটে প্রলেপ পড়েছে ইটের গায়ে। আত অতল গহ্বরে ঠাঁই হলেও, কোনও এক সময় ওই রাস্তা মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
প্রশান্ত মহাসাগরের নীচে হারানো সভ্যতা!
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলের নীচে প্রাচীন এক হ্রদের হদিশ মেলে। হাজার হাজার বছর আগে যা শুকিয়ে যায় এবং কালক্রমে ঠাঁই হয় জলের নীচে। সম্প্রতি জলে নিমজ্জিত নুটকা নামের একটি পাহাড়ের উপর শুকিয়ে যাওয়া হ্রদটির হদিশ পান বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, ওই হ্রদের মেঝের অংশ দেখতে খরা প্রকোপিত জমির মতো। দীর্ঘ দিন জ্বলন্ত লাভার নীচে চাপা পড়ে থাকা. সঙ্কোচন এবং প্রসারণের ফলেই এমন পরিণতি বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকার ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং ন্যাশনাল মেরিন স্যাংচুয়ারিজের উদ্যোগে Papahānaumokuākea Marine National Monument নামের সংরক্ষিত সাগর অঞ্চলে সঞ্চিত প্রবালের খোঁজে সম্প্রতি অভিযান শুরু হয়। আমেরিকার সমস্ত উদ্যানকে একত্রিত করলেও, তার চেয়েও আয়তনে ঢের বড় ওই সংরক্ষিত অঞ্চল। এখনও পর্যন্ত তার ৩ শতাংশই ঘুরে দেখতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তাতেই জলের ৩ হাজার মিটার নীচে ওই ইট নির্মিত রাস্তার খোঁজ মিলেছে। এই অভিযানের জন্য হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের উত্তরে নওটিলাস নামের একটি জাহাজ মোতায়েন রয়েছে। সেখান থেকেই জলে নামছেন ডুবুরি এবং গবেষকরা। জাহাজে বসে তাতে নজরদারি চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। জলের নীচে কী কী চোখে পড়ছে ইউটিউবে তা লাইভ সম্প্রচারও করা হয় EVNautilus নামের ইউটিউব চ্যানেলে।
প্লেটোর 'কল্পকথা' কি আসলে বাস্তব!
প্রশান্ত মহাসাগরের নীচে থাকা ১৫ লক্ষ ১০ কিলোমিটার এলাকাকে ঐতিহ্য তালিকায় রেখেছে ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাশনাল মনুমেন্ট। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের লোককথায় ওই বিশেষ জায়গাটির উল্লেখ রয়েছে। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ শতাব্দিতে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর লেখায় যে অ্যাটল্যান্টিস (Atlantis Civilisation) সভ্যতার উল্লেখ রয়েছে, সেটি আমেরিকার চিহ্নিত, প্রশান্ত মহাসাগরের ওই এলাকাতেই অবস্থিত ছিল বলে মনে করা হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ওই সভ্যতা জলের নীচে তলিয়ে যায় বলে পাওয়া যায় উল্লেখ।
'কল্পকথা'য় অ্যাটল্যান্টিস সভ্যতার এমনই ছবি পাওয়া যায়। ছবি: পিক্সাবে।
নিজের লেখায় প্লেটো দাবি করেন, তিনি যে সময় লিখতে বসেন, তারও ৯ হাজার বছর আগে ওই সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে। গ্রিকদের সামুদ্রিক দেবতা পসেইডনের মন্দির, বড় বড় স্তম্ভ-সহ অ্যাটল্যান্টিসে (Lost Civilisation) নজরকাড়া স্থাপত্যের কথা শোনা যায়। সুনামি বা লাভানির্গমনে চাপা পড়ে ওই সভ্যতা জলের নীচে তলিয়ে যায় বলে উল্লেখ রয়েছে। যদিও পরবর্তী কালে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন যে, নিজের দার্শনিক তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা দিতেই মাথা খাটিয়ে অ্যাটল্যান্টিস নিয়ে ওই ‘কল্পকথা’ তৈরি করেছিলেন প্লেটো। কিন্তু প্রশান্ত মহাসাগরের গর্ভে সদ্য আবিষ্কৃত ওই রাস্তা প্লেটোর সেই ‘কল্পকথা’ বাস্তব হলেও হতে পারে বলে উৎসুক মানুষের মনে ভাবনার উদ্রেক করছে।