মন ও ইন্দ্রিয় যখন নিজের বশে থাকে না, তখন কী ঘটে যেতে পারে তা বলা হয়েছে ভগবদ্গীতায়। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়, সাংখ্য যোগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মার্গদর্শন করিয়েছেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যখন অর্জুন সামনে নিজের আত্মীয় পরিজন, গুরুজনদের সামনে দেখতে পান, তখন তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে হবে বলে শোকবিহ্বল হয়ে পড়েন। তিনি সখা কৃষ্ণের কাছে শোক নিবৃত্তির উপায় জানতে চান। তখন তাঁকে পথ দেখান শ্রীকৃষ্ণ। বলেন নানা উপায়।
এই অধ্যায়েরই ৬৩ নম্বর শ্লোকে ভগবান ক্রোধ থেকে কী ঘটতে পারে তাঁর বর্ণনা করেছেন।
ক্রোধাদ্ভবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্মৃতিবিভ্রমঃ ।
স্মৃতিভ্রংশাদ্ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎ প্রণশ্যতি।। ৬৩
শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী) অনুসারে এর অর্থ, ক্রোধ থেকে মূঢ়ভাব উৎপন্ন হয়, মূঢ়ভাব থেকে স্মৃতিভ্রংশ হয়, স্মৃতিভ্রংশে বুদ্ধিনাশ বা জ্ঞানশক্তির নাশ হয় এবং বুদ্ধিনাশ হলে সেই ব্যক্তি নিজ স্থিতি থেকে পতিত হয়।
ক্রোধ থেকে আসে মূঢ়ভাব। অর্থাৎ মানুষ জ্ঞানবুদ্ধিহীন হয়ে পড়ে। মানুষের মনে যখন ক্রোধ চেপে বসে, ও সে যখন তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তখন কাজ করে না বিবেকবুদ্ধি। সেই অবস্থায় সে কী কাজ করছে, তার ফলাফল কী হতে পারে, তা মাথায় থাকে না মানুষের। সকলেই জানেন, ক্রোধ পেচে বসলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়, গীতার ভাষায় স্মরণশক্তি ভ্রমিত হয়। সে বুঝতেই পারে না, কার সঙ্গে কী আচরণ করছে। ফলে নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ চলে যায়।
স্মৃতিবিভ্রম হলে মনে থাকে না তার কর্তব্য কী, অকর্তব্য কী। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার শক্তি থাকে না। এই দশাকে বুদ্ধিনাশ হওয়া বলে। এমন হলে মানুষ যা করা দরকার তা ভুলে যায়। ব্যবহার খারাপ হয়ে যায়। কটুতা, কঠোরতা, চলে আসে। হিংসাভাব বেরিয়ে আসে। সেই সময়ই মানুষের ব্যবহারে ছন্দপতন হয়। নিজ স্থিতি থেকে পতিত হয়। এর ফলে পরলোকে নরকযাত্রা পর্যন্ত হতে পারে। গীতায় একেই বুদ্ধিনাশ থেকে পতনের কথা বলা হয়েছে।
তাই মন সহ ইন্দ্রিয়াগুলিকে বশে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ভগবান। এর পরবর্তীতে শ্রীকৃষ্ণ বুঝিয়েছেব একজন স্থিতপ্রজ্ঞ মানুষের আচরণ কেমন হওয়া দরকার।
আরও পড়ুন :
মৃত্যুর পর আত্মার কী হয়? কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে কী বলেছিলেন সখা কৃষ্ণ?