গীতার (Bhagvad Gita) রহস্য অপার। পণ্ডিতরা বলেন, এই রহস্যময় গ্রন্থে সমগ্র বেদের সারতত্ত্ব সংগৃহীত হয়েছে। গীতা জীবনে যে কোনও সঙ্কটের সময়ই পথ দেখায়। এই গ্রন্থে ভগবানের উপদেশগুলি খুবই সরল ভাবে বর্ণিত, যা এখনও অনেকের জীবনেই প্রাসঙ্গিক। জীবনের একেক স্তরে গীতার বাণীগুলির উপলব্ধি একেক রকম হয়, তাই গীতা সর্বদা নতুনই থাকে। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় অর্থাৎ সাংখ্যা যোগে, অর্জুন যখন যুদ্ধ করতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে, শোক থেকে মুক্তির উপায় জানতে চান, তখন তাঁকে পথ দেখান ভগবান শ্রীকৃষ্ণ (Lord Krishna) । এই অধ্যায়ের শেষ শ্লোকের আগের শ্লোকটিতে ভগবান তৃতীয় পাণ্ডবকে প্রকৃত শান্তি পাওয়ার পথ দেখিয়েছেন। ভগবান বলেছেন (Bhagvad Gita Quotes) -
বিহায় কামান্ যঃ সর্বান্ পুমাংশ্চরতি নিঃস্পৃহঃ।
নিৰ্মমো নিরহঙ্কারঃ স শান্তিমধিগচ্ছতি৷৷ ৭১
অর্থাৎ কি না যে ব্যক্তি ভোগের সর্বপ্রকার কামনা-বাসনা পরিত্যাগ করতে পারেন, যেকোনও জড় বিষয়ের প্রতি যদি নিষ্পৃহ, নিরহঙ্কার ও মমত্ববোধরহিত হতে পারেন, তাহলে তিনি প্রকৃত শান্তি লাভ করেন।
শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী) অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ বলতে চেয়েছেন, ইহলোক ও পরলোকের সমস্ত ভোগের সর্বপ্রকার কামনার জিনিস থেকে মন দূরে সরাতে হবে। ভোগ বাসনা ত্যাগ করতে হবে। এখানে ভগবান বলতে চেয়েছেন, স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিদের এরকম আচরণ করা দরকার। সাধারণ মানুষ শরীরকেই নিজের স্বরূপ বলে মনে করে। শরীর ব্যতীত নিজেকে সে কিছুই ভাবতে পারে না। জ্ঞানী ব্যক্তিরা তা করেন না। এই দেহ-অভিমান অর্থাৎ অহংকারকে ত্যাগ করতে হবে।
সাধারণ মানুষের হৃদয় তাঁর স্ত্রী, পুত্র, ভাই, বন্ধু পরিজনের সঙ্গে জুড়ে থাকে। তাঁর বাড়ি ঘর, ধন সম্পদ , যাবতীয় ঐশ্বর্যের প্রতি অমোঘ টান থাকে। নিজের কর্মফলকে বড্ড আপন মনে করেন। একেই বলে মমত্ববোধ ।গীতায় মানুষকে “নির্মম’ বা মমতাশূন্য হতে বলা হয়েছে। তবে নির্মম বা মমতাশূন্য হওয়া মানে নিষ্ঠুর হতে বলা হয়নি কিন্তু। ‘নিঃস্পৃহ’ হতে হবে। অর্থাৎ স্পৃহাহীন হতে হবে। কোনও জিনিস না পেলে আমার চলবে না, এরূপ ভাব দূর করতে হবে। প্রকৃত শান্তিলাভের জন্য নিষ্কাম এবং নিঃস্পৃহের সঙ্গে নির্মম ও নিরহঙ্কারও হতে হবে। ভগবান বলেছেন, যতক্ষণ বিন্দুমাত্রও কামনা,মমতা, স্পৃহা, অহংকার মনে অবশিষ্ট থাকে, ততক্ষণ প্রকৃত শান্তি লাভ হয় না।
আরও পড়ুন :
মৃত্যুর পর আত্মার কী হয়? কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে কী বলেছিলেন সখা কৃষ্ণ?