Bhagavad Gita Explains : রাগ, ভয় ও ক্রোধ মানুষকে সর্বদা (Religion) উদ্বেগে রাখে। আর এই উদ্বেগ মানুষের জীবনে ডেকে আনে নানারকম অশান্তি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পার্থসারথির কাছে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বের উত্তর চেয়েছেন পার্থ। প্রিয়জনদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে গিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অর্জুন (Arjun) । তখন তাঁর মনকে শান্ত করতে শ্রীকৃষ্ণ (Lord Krishna) বেশ কিছু দর্শন তুলে ধরেন। বিহ্বল অর্জুনকে পথ দেখান শ্রীকৃষ্ণ। সখা কৃষ্ণ তৃতীয় পাণ্ডবকে স্থিতপ্রজ্ঞ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। (Religion) স্থিতপ্রজ্ঞ বলতে কী বোঝানো হয়, তার ব্যাখ্যা মিলবে সাংখ্য যোগের ৫৬ নম্বর শ্লোকে।
যেখানে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন -
দুঃখেম্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ।
বীতরাগভয়ক্রোধঃ স্থিতধীর্মুনিরুচ্যতে৷৷
শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী) অনুসারে এর অর্থ, দুঃখে অনুদ্বিগ্ন চিত্ত, সুখে স্পৃহাহীন এবং আসক্তি, ভয় ও ক্রোধরহিত মুনিকেই স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়৷ ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যাঁর মন উদ্ভিগ্ন হয় না, সুখ উপস্থিত হলেও যাঁর স্পৃহা জাগে না এবং যিনি রাগ, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত, তিনিই স্থিতধী ।
স্থিরবুদ্ধি মানুষ বলতে ভগবান গীতায় বোঝাতে চেয়েছেন, অতি কঠিন পরিস্থিতিতেও যাঁর হৃদয়ে উদ্বেগের উথায়-পাথাল ঢেউ দেখা যায় না, যাঁর মনে সর্বতোভাবেই উদ্বেগের অভাব। ভগবান বোঝাতে চেয়েছেন, যার বুদ্ধি পরমাত্মার স্বরূপে অচল ও স্থির হয়ে যায়, সেই আসলে স্থিতপ্রজ্ঞ।
কারও প্রিয় মানুষের যদি আকস্মিক বিয়োগ ঘটে কিংবা অকারণে কাউকে যদি ভয়ংকর অপমান বা নিন্দা সইতে হয়, তাহলেও যদি তিনি মাথা স্থির রাখতে পারেন, তাহলেই তিনি স্থিতধী। জগতে কোনও দুঃখ যাঁর মনে বিন্দুমাত্র উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে না, তিনিই স্থিতধী। আবার 'সুখেষু বিগতস্পৃহঃ' বলতে বোঝায় স্থিরবুদ্ধি ব্যক্তির চিত্তে অতিরিক্ত সুখও চাঞ্চল্য সৃষ্টি করতে পারে না। স্থিতধী মানুষ দুঃখ ও সুখ এই দুয়েতেই মাথা ঠান্ডা রাখেন।
‘বীতরাগভয়ক্রোধঃ', এই কথাটির অর্থ এই ধরনের ব্যক্তির মনে বা কথায় আসক্তি, ভয় ও ক্রোধ থাকে না। তিনি আদতেই নিরুত্তাপ হন। ভগবান এখানে শুধু মনের কথাই বলেননি, স্থিরবুদ্ধি ব্যক্তির বাক্যেও সংযম থাকে। তাঁর বাক্যও নির্বিকার ও শুদ্ধ হয়। মন সহ ইন্দ্রিয়াগুলিকে বশে রাখতে পারলেই স্থিতধী হওয়ার পথে এগিয়ে যআওয়া যায়।
আরও পড়ুন :
মৃত্যুর পর আত্মার কী হয়? কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে কী বলেছিলেন সখা কৃষ্ণ?