কলকাতা: ছট পুজো (Chhath Puja) সূর্য দেবতার উপাসনার উৎসব যিনি তার আলো দিয়ে বিশ্বকে আলোকিত করেন এবং মানুষকে শক্তি ও জীবন দেন, আসলে সূর্য দেবতাকে ধন্যবাদ জানানোর উদ্দেশ্যই এই দিন পালন।
পুরাণে জানা যায়, ঋষিরা কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এই উৎসবের ঐতিহ্যের মাধ্যমে সূর্য দেবতার আরাধনার করে গিয়েছেন। ছট উৎসবের মাধ্যমে আমরা সূর্য দেবতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ পাই, অর্ঘ্যের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি আমরা তাঁর আশীর্বাদ লাভ করি।
সূর্যের মধ্যেই নিহিত প্রাণশক্তির উৎস। তাই সূর্যের উপাসনা হয় এদিন। সূর্য অনেক রোগের বিনাশ করে বলেও এই পুজোর বিশেষ গুরুত্ব। মতা রয়েছে। সূর্যের শুভ প্রভাবে ব্যক্তি স্বাস্থ্য, গতি এবং আত্মবিশ্বাস লাভ করে।
কার্তিক শুক্লা চতুর্থী থেকে কার্তিক শুক্লা সপ্তমী অবধি পালিত হয় ছট। এই ব্রতে সূর্যই উপাস্য। সেই সঙ্গে পুজো হয় ছট্টি মাইয়ার। ছটলক্ষ্মীও বলা হয়। ৪ দিনধরে চলে ছটের সেলিব্রেশন। এই পুজোয় উপবাস একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। দীর্ঘ ৩৬ ঘণ্টা উপবাস করতে হয়।
কথিত আছে, রামচন্দ্র লঙ্কা বিজয় করে ফিরে এসে, অযোধ্যায় পুজো করেন কুলদেবতা সূর্যের। ছট পুজোর সময়ই এই পুজো করা হয় বলে বিশ্বাস। অস্তগামী সূর্যকে ষষ্ঠীর দিন পুজো করা হয়। সেদিন নৈবেদ্য হিসেবে দুধ অর্পণ করা হয়। ব্রতের শেষদিন অর্থাৎ সপ্তমী তিথিতে ফের জলাশয়ে গিয়ে উদীয়মান সূর্যকে বন্দনা করা হয়।
ছট পুজোয় কোনও মূর্তি উপাসনা করা হয় না। উদীয়মান সূর্যকে গঙ্গার তীরে গিয়ে বন্দনা করা হয়। তবে এখন অনেকে মূর্তি নির্মাণও করেন। পারিবারিক সুখ সমৃদ্ধি ও বাড়ির ছোটদের মঙ্গলকামনায় ছটের পুজো হয়। এই পুজোর নৈবেদ্য হিসেবে দেওয়া হয়, কলা, ফল, ক্ষীর, গুড়, মিষ্টি, ঠেকুয়া ইত্যাদি।
আরও পড়ুন, সকালে ভগবান বিষ্ণুর বলা এই ৪ কাজ করুন, জীবন থেকে দূরে থাকবে পরাজয়
এ বছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথি শুরু হচ্ছে, ১৮ নভেম্বর, শনিবার সকাল ০৯.১৮ মিনিট থেকে। পরের দিন রবিবার, ১৯ নভেম্বর সকাল ০৭:২৩ মিনিটে শেষ হবে৷ উদয়তিথি অনুসারে, ছট পূজা ১৯ নভেম্বর।
মহাভারতে ছট
কথিত আছে, সূর্য দেবতার আশীর্বাদে কর্ণ মহান যোদ্ধা হয়েছিলেন। কর্ণ ছিলেন সূর্যের পরম ভক্ত। তিনি প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা জলে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবের পুজো করতেন। পাণ্ডবরা যখন জুয়ায় তাদের সমস্ত রাজত্ব হারিয়েছিলেন, সেইসময় দ্রৌপদী রাজসিংহাসন ফিরে পাওয়ার জন্য সূর্য দেবতার পুজো করেছিলেন। ৩৬ ঘণ্টা ছটের উপবাস রেখেছিলেন। দ্রৌপদী যখন নিয়ম মেনে ছট উত্সব পালন করছিলেন সেই সময় পাণ্ডবরা তাদের রাজপ্রাসাদ ফিরে পেয়েছিলেন।