মধুকৈটভবিধ্বংসি বিধাতৃবরদে নমঃ। 
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি।। 



শ্রী শ্রী চণ্ডীর ( Shree Shree Chandi ) বন্দনায় আমরা এই স্তোত্র বলে থাকি। মধু ও কৈটভ নামে দুই রাক্ষসের দৌরাত্ম্যের যখন দেবতারাও সঙ্কটে, তখন আদ্যাশক্তি মহামায়া বাঁচিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের হাতে মধু ও কৈটভকে বধ করেননি তিনি। এই দুই দুরাত্মা বধ হয়েছিল নারায়ণের ( Lord Narayana )  চক্রে। কিন্তু নেপথ্যে ছিলেন দেবীই। কী সেই গল্প ? চণ্ডীকথায় জানা যায় সে-সব কথা।  


সে-সময় পৃথিবীতে জনমনিষ্যি ছিল না। ত্রিভুবন জুড়ে শুধুই জল, জল আর জল। আর সেই জলের উপরই অনন্তনাগ নামে এক বিরাট সাপের উপর যোগনিদ্রায় নারায়ণ। আর তাঁর নাভিপদ্মের উপর বসে ধ্যান করতেন ব্রহ্মা। হাজার হাজার বছর ধরে চলছে এই ধ্যান। এমন সময় বিষ্ণুর কান থেকে বের হওয়া দু-টুকরো ময়লা থেকে  জন্ম হয় দুই অসুরের। জলে সাঁতার কাটতে কাটতে তারা ভাবে,  এই এত জল কোথা থেকে এল? তারাই বা সেখানে কোথা থেকে এল। তা জানতে তারা ধ্যানে বসে পড়ে। হাজার হাজার বছরের তপস্যায় তাদের সামনে হাজির হন দেবী সরস্বতী। তিনি দুই রাক্ষসকে ইচ্ছামৃত্যুর বর প্রদান করেন। আর তা পেয়ে তো আত্মহারা দুই রাক্ষস। তাদের আর কেউ মারতে পারবে না। যেই ভাবা অমনি উৎপাত শুরু। প্রথমেই তারা ধেয়ে এলেন ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর দিকে। ওই দুই অসুরের উপর অস্ত্র ব্যবহার করেননি নারায়ণ, কারণ তাদের হাতে অস্ত্র ছিল না। ৫ হাজার বছর ধরে বিষ্ণু আর ওই দুই রাক্ষসের মল্লযুদ্ধ চলতে লাগল। কাণ্ড দেখে ব্রহ্মা শরণাপন্ন হলেন আদ্যাশক্তি মহামায়ার। তাঁর ইচ্ছায় বিষ্ণুর চোখ থেকে বার হল, তীব্র জ্যোতি, মুখ থেকে বার হল জ্যোতি, নাক থেকে নির্গত হল জ্যোতি। আর অবতীর্ণ হলেন মহামায়া। আর তিনি মধু ও কৈটভের উপর মায়া বিস্তার করলেন। মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে তারা তখন ভগবান বিষ্ণুর শরনে এসে বলল, আমরা আপনার বীরত্বে মুগ্ধ। আপনি আমাদের কাছে বর চাইতে পারেন। বরাবর মানুষ থেকে আসুর , সবাই দেবতাদের কাছে বর চেয়ে এসেছেন। সেই প্রথম কোনও অসুর ভগবানকে বর দিতে চাইল। সবই মহামায়ার লীলা। এরপরই বিষ্ণু মনে মনে হেসে বলেন, তোমরা আমার হাতেই মরবে, এই বর তোমরা আমাকে দাও। আর তারাও কৌশল করে বলল, তবে আমাদের মারতে হবে এমন জায়গায় যেখানে জল নেই। আসলে তখন তো ত্রিভুবনে শুধুই জল। বিষ্ণু তাঁদের একে একে জানুতে শুতে বললেন ও সুদর্শন চক্র দিয়ে ছিন্ন করে ফেললেন তাদের মাথা ! এই ভাবেই বধ হল মধু কৈটভ। আর তাদের বিরাট বিরাট বপুর মেদ থেকে তৈরি হল পৃথিবী, তাই তো পৃথিবীর আরেক নাম মেদিনী। 

আরও পড়ুন :


৩০০ বছর ধরে নিমকাঠের প্রতিমার আরাধনা, বিষ্ণুপুরে উগ্রচণ্ডা রূপে পূজিত হন দশভূজা