প্রসেনজিৎ সাহা, আগরতলা: রাজন্য আমল থেকেই আগরতলা দুর্গাবাড়িতে পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। প্রায় ১৫০ বছর ধরে আগরতলায় চলছে এই পুজো। এর আগে চট্টগ্রামের চাকলা রোসনাবাদে মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মানিক্যের সময় শুরু হয়েছিল পুজো। পুরোহিত ছিলেন উমাকান্ত ভট্টাচার্য। তারপর থেকে রাজবাড়ীর ঠিকানা বদলে অমরপুর,উদয়পুর,পুরনো আগরতলা হয়েছে। কিন্তু পুরোহিত বদলায়নি। বংশানুক্রমে সেই পরিবারের হাতেই রয়েছে পুজোর দায়িত্ব। বর্তমানে ষষ্ঠ পুরুষ জয়ন্ত ভট্টাচার্য পুজোর কাজ পরিচালনা করছেন।
এখনও বর্তমান মহারাজার নামেই সংকল্প হয় পুজো। ভারতভুক্তির শর্ত অনুযায়ী মন্দির এবং পুজো পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে সরকার।
দেবীদুর্গা দশভূজা হলেও, একমাত্র আগরতলা দুর্গাবাড়িতেই দেবীকে দেখা যায় দুহাতে। কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। সন্ধ্যা আরতির সময় মহারানী সুলক্ষণা দশভূজা রূপ দেখে ভয় পেয়েছিলেন। তারপর দেবীর স্বপ্নাদেশে সামনে দুই হাত এবং পেছনে আটটি হাত লুকায়িত রাখা হয়। সামিশান্ন ব্যাঞ্জনাদি ভোগে সপ্তমী- নবমী পুজো হয়। থাকে মাছ মাংস, ডিম। তিন দিন হয় পাঁঠা বলি। নবমীতে পাঠা ও মহিষ বলি হয়।
অতিবৃষ্টির পর নীল আকাশে এখন সাদা মেঘের ভেলা। জলাশয়ের পাশে হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। সর্বত্রই উৎসবের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। বারোয়াড়ির পাশাপাশি বাড়ির পুজোতে ও চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। হরিপাল থানার নালীকুল বড়গাছিতে ২৯৩ বছরের প্রাচীন সিংহ, বসু মল্লিক ও রায় পরিবারের পুজো ঘিরে পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততা চরমে। পুজোর আয়োজনে যেনও কোনও খামতি না থাকে তা নিয়ে বৈঠক চলছে ঠাকুন দালানে। এখনও প্রাচীন রীতিনীতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দেবীর আরাধনা করে থাকেন এই তিনটি পরিবার।
আরও পড়ুন, পুজোর মাঝে হুগলির BJP নেতাকে বেধড়ক মার ! নেওয়া হল হাসপাতালে
অপরদিকে, সাড়ে ৩০০ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে আজও স্বমহিমায় পুজিত হন দুর্গাপুরের গোপালমাঠের বড় মা । পশ্চিম বর্ধমানের এই পুজোয় একাধিক বিষয়গুলি মন টানে বারবার।প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর আগে আট গ্রাম সুজোড়া, মেজেডিহি, বনগ্রাম, জগুরবাঁধ, নাগারবাঁধ এইসব গ্রামগুলির একটাই পুজো হত জাঁক জমক করে। প্রায় সত্তর বছর আগে সেই জায়গায় রাষ্ট্রায়ত্ত ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে সেখানেই। ওই আটটি গ্রাম উঠে যায় তখন পার্শ্ববর্তী এলাকায় নতুন গ্রামের নাম দেওয়া হয় গোপালমাঠ। গ্রাম উঠে যাওয়ার সময় মন্দিরের বিগ্রহর কাঠামো দামোদরের জলে ভাসিয়ে দিয়ে আসা হয়।পরবর্তীতে নতুন করে গ্রাম বা বসতি গঠনের পর সেই ঘটক পরিবারের কেউ স্বপ্নাদেশ পান। দামোদর থেকে সেই কাঠামো তুলে নিয়ে এসে, বড় মার বিগ্রহ নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি বছর তারপর থেকে শুরু হয় পুজো।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।