কলকাতা : অষ্টমীর ( Astami )  শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমীর ( Navami )  প্রথম ২৪ মিনিট (দুটি চান্দ্র দিনের মধ্যে মোট ৪৮ মিনিট) সন্ধিক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। এই সময় দেবীর সন্ধি পুজো ( Sandhi Puja )  হয়।  এটি  সবচেয়ে শুভ সময় বলে মনে করা হয়। 


এই সময়ে দুর্গাকে চামুণ্ডা ( Chamunda ) রূপে পুজো করা হয়, যিনি চণ্ড অসুর ও মুণ্ড অসুরকে বধ করেছিলেন। এই পুজোর গুরুত্ব অপরিসীম। দুর্গাপুজোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আচার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 


চণ্ড ও মুণ্ড হিমালয়ের শৃঙ্গে পৌঁছে চণ্ডীকে দেখল মা কৌশিকী রূপে।  সিংহের পিঠে বসে অল্প অল্প হাসছেন।  একটুও দেরি না করে চণ্ড আদেশ সৈন্যদলকে আদেশ দিল দেবীকে ধরে আনতে। রাগে দেবীর মুখ একেবারে লাল হয়ে গেল। তারপর রাগ বাড়তে বাড়তে মুখ কালো হয়ে গেল।  ভুরু কুঁচকে হল ধনুকের মতো। দেবীর কপাল থেকে বেরিয়ে এল এক অদ্ভুতদর্শন মূর্তি। কৌশিকী দেবীরই আরেক রূপ দেবী চামুণ্ডা।  গলায় তাঁর নরকঙ্কাল, নরমুণ্ডের মালা। পরনে বাঘছাল।  


যুদ্ধ যতই বাড়ল দেবী চামুণ্ডার চেহারা হয়ে গেল বিরাট। সৈন্যদের টপাটপ মুখে পুরে দিতে লাগলেন !  চণ্ডীর এক ভয়াবহ রূপ চামুণ্ডা। তিনি একাধারে গিলে ফেললেন মাহুতসুদ্ধ হাতি, অশ্বারোহী সেনা, বিরাট বিরাট অসুর ইত্যাদি ইত্যাদি। দেবীর আক্রমণে অসুর সৈন্য প্রায় শেষ, তখন ঝাঁকে ঝাঁকে তির ছুড়তে লাগল চণ্ড আর মুণ্ড। এবার চণ্ড মুণ্ডর দিকে তেড়ে গেলেন চামুণ্ডা রূপে চণ্ডী।  


দুর্গার মতো দেবী চণ্ডীরই একটি রূপ এই দেবী। এঁর নাম চামুণ্ডা। খাঁড়া নিয়ে তেড়ে গেলেন দেবী ।  চামুণ্ডার হাতেই বধ হয় চণ্ড ও মুণ্ড।  এই পবিত্র সন্ধিক্ষণে  পশু বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে  । বলি বলতে বোঝায় যা কিছু অশুভ, যা কিছু অন্যায়, মনের কোনে জমে থাকা কালো যত, তার বলি দেওয়া।  ১৯০১ সালে যখন বেলুড় মঠে প্রথম দুর্গা পুজো উদযাপিত হয়, তখন মা বলিতে নিষেধ করেন।  মায়ের আদেশে পশুর পরিবর্তে, একটি কলা প্রতীকী 'বলি' দেওয়া হয়  । এভাবেই চলে আসছে। 


এই প্রসঙ্গে রামায়ণেও উল্লেখ রয়েছে রাবণ বধের লক্ষ্যে মা দুর্গার যে অকালবোধন করেছিলেন রামচন্দ্র, তখনও তিনি সন্ধি পুজো করেছিলেন নিষ্ঠা ভরে। সে সময় ১০৮ পদ্মের দরকার ছিল। কিন্তু পুজো করতে গিয়ে একটি পদ্ম কম পড়ে। রামচন্দ্র তখন তাঁর কমললোচন তীর দিয়ে উপরে মা-কে নিবেদন করতে উদ্যত হলে দেবী আবির্ভূতা হয়ে তাঁকে থামান।