শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হল সাক্ষাৎ ভগবানের দেখানো পথের সংকলন। এর মহিমা অপার । শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার ক্ষমতা অসীম। গীতার বর্ণনা পড়লেই জানা যায়, জীবনে কোনও সমস্যায় পড়লে কোন পথ অনুসরণ করা উচিত।  ইতিহাস পুরাণাদিতে বহুস্থানে গীতার মহিমা বর্ণিত হয়েছে। 

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সামনে গুরুজন, প্রিয় ভ্রাতাদের দেখে অস্ত্রত্যাগ করতে চেয়েছিলেন অর্জুন। নিজে শোকের বশবর্তী হয়ে বলেছিলেন, এই যুদ্ধে জয়ের থেকে মৃত্যুও শ্রেয়। বীর অর্জুন বলেন, তাঁ শিক্ষাগুরুদের জীবনহানি করে এই জগৎ ভোগ করার থেকে ভিক্ষা করে জীবন  ধারণ করা শ্রেয়। তাঁরা পার্থিব বস্তুর অভিলাষী হলেও আমার গুরুজন। গুরুজনদের হত্যা করলে সেই যুদ্ধলব্ধ সব কিছুই তাঁদের রক্তমাখা হবে। তাই তিনি অস্ত্র ছাড়তে চান। অর্জুন এও বলেন, যদি রাজা ধৃতরাষ্ট্রের ছেলে, যাঁরা কি না তাঁরই ভাই, তাঁদের হত্যা করলে আর তাঁর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করবে না।  এই সময়ই ভগবান অর্জুনকে কর্তব্য পালনের সুশিক্ষা দিয়েছেন।  তিনি বলেন - 


দেহী নিত্যমবধ্যোহয়ং দেহে সর্বস্য ভারত। 

তস্মাৎ সর্বাণি ভূতানি ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।৩০।। 



স্বধর্মমপি চাবেক্ষ্য ন বিকম্পিতুমর্হসি। 

ধর্ম্যাদ্ধি যুদ্ধাচ্ছ্রেয়োহন্যৎ ক্ষত্রিয়স্য ন বিদ্যতে।।৩১।। 



যদৃচ্ছয়া চোপপন্নং স্বর্গদ্বারমপাবৃতম্। 

সুখিনঃ ক্ষত্রিয়াঃ পার্থ লভন্তে যুদ্ধমীদৃশম্।।৩২।। 

 


অথ চেত্ত্বমিমং ধর্ম্যাং সংগ্রামং ন করিষ্যসি। 

ততঃ স্বধর্মং কীর্তিং চ হিত্বা পাপমবাস্প্যসি।।৩৩।।





যার অর্থপ্রাণীদের দেহে অবস্থিত আত্মা সব সময়ই অবধ্য। আত্মার মৃত্যু নেই। অতএব কোন জীবের জন্য  শোক  করা উচিত নয়। ধর্মযুদ্ধে অংশ নেওয়া ক্ষত্রিয়ের ধর্ম। এই যুদ্ধে অস্ত্র ধরাকে স্বধর্ম বিবেচনা করা উচিত অর্জুনের। ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করার থেকে ক্ষত্রিয়ের  পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নেই। তাই, তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিত নয়। স্বর্গের দ্বার খুলে যায় এই প্রকার ধর্মযুদ্ধে অংশ নিলে। এই  সুযোগ না চাইতেই যে সব ক্ষত্রিয়ের কাছে আসে, তাঁরা ভাগ্যবান। তাই অর্জুন যদি এই ধর্মযুদ্ধ না করেন, তা হলে তোমার তিনি ধর্ম এবং কীর্তি ভ্রষ্ট হবেন ও পাপ ভোগ করবেন।  

এছাড়াও এই অধ্যায়ে ভগবান বলেছেন, 



 কর্কণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। 

মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বাকর্মণি।।৪৭।। 

যার অর্থ, তোমার কর্মেই অধিকার, তার ফলে নয়। তাই তুমি কর্মফলের হেতু হয়ো না, আবার কর্মত্যাগেও যেন তোমার প্রবৃত্তি না হয়। অর্থাৎ জ্ঞানী ব্যক্তিকে নিষ্কাম কর্ম করতে হবে। দায়িত্ব সম্পাদন করতে হবে। দায়িত্ব থেকে পিছিয়ে আসাও চলবে না।