কলকাতা: কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে নিজের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা ভেবে অনুতপ্ত, ব্যাকুল ও অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন অর্জুন। শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের বিষাদ দূর করার জন্য গীতার জ্ঞান দেন। কৃষ্ণের সেই উপদেশ বর্তমান জীবনেও প্রাসঙ্গিক সব ক্ষেত্রেই। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়- সাংখ্যযোগে তেমনই কিছু উপদেশ দিয়েছেন তিনি। 


গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- 


ক্লৈব্যং মা স্ম গমঃ পার্থ নৈতত্ত্বয্যুপপদ্যতে। 
ক্ষুদ্রং হৃদয়দৌর্বল্যং ত্যক্তোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।                  


হে পার্থ! এই সম্মান হানিকর। ক্লীবত্বের বশবর্তী হয়ো না। এই ধরনের আচরণ তোমার পক্ষে অনুচিত।  হে পরন্তপ!হৃদয়ের এই ক্ষুদ্র দুর্বলতা পরিত্যাগ করে তুমি উঠে দাঁড়াও। চাওয়া-পাওয়া, অহংকার ত্যাগ করে নিজের কর্ম করাই মানুষের কর্তব্য। নিষ্কাম কর্মই শান্তির পথ। যে কর্ম আমাদের দেওয়া হয়েছে, তা করে চলতে হবে। কারণ কর্মই জীবনের উদ্দেশ্য। কর্ম ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।                                                                  


সাফল্যের খিদেই মানুষকে উৎকণ্ঠায় ফেলে। সুতরাং জয়-পরাজয়, লাভ-হানি এসব না ভেবে কর্ম করে চলতে হবে। তাতেই মানুষ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। ফল মানুষের হাতে নেই। সে শুধু নিজের কর্মটুকু করতে পারে। 


কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন।
মাকর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সংডগোত্স্বকর্মাণি।।
ইতি তে জ্ঞানমাখ্যাতং গুহ্যদ্গুহ্যতরং ময়া।
বিমৃশ্যৈমদশেষেণ যথেচ্ছসি তথা কুরু।।


সকলের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন, কিন্তু শুধু মাত্র নিজের বুদ্ধির ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। শুধু মানুষেরই এই সৌভাগ্য রযেছে যে সে নতুন কর্ম করার জন্য স্বতন্ত্র। যার ফলে উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে নিজের অভিজ্ঞতা রচনা করে ইতিহাসে অদ্বিতীয় স্থান লাভ করতে পারে। 


জয়-পরাজয় না ভেবে কর্ম করতে হবে। ফলে পরাজয় বা লক্ষ্যপূরণ না হলে মানুষ ভেঙে পড়বে না। আসবে না অবসাদও। আবার জিতলে থাকবে না বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। তা পরের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কর্মফল কারও হাতে নেই। ফলে ফলের চিন্তা না করেই কাজ করতে হবে। স্মরণ করতে হবে ঈশ্বরকে।.


আরও পড়ুন, কোনও কাজে সফলতা পেতে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ জরুরি, গীতায় কর্মযোগের পথ দেখিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ