সাংখ্য যোগে শোকে মূহ্যমান অর্জুনকে মনোবন জোগাতে শ্রীকৃষ্ণ আত্মার অমরত্বের কথা বলেছেন। তিনি নানা ভাবে বুঝিয়েছেন আত্মা বাহ্যিক দেহকে ছেড়ে গেলেও তাঁর মৃত্যু হয় না। আত্মা নিজে মরে না, কাউকে মারেও না। ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বুঝিয়েছে, যার জন্ম হয়েছে, সে অবশ্যই মরবে এবং যে মারা গেছে সে অবশ্যই জন্মাবে।
যে শ্লোকের প্রেক্ষিতে এই আলোচনা সেটি হল -
জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি ৷৷ ২৭ ॥
এই শ্লোকের আক্ষরিক অনুবাদ করলে দেখা যায়, যে জন্মায় তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত এবং যে মরে তাঁর জন্মও নিশ্চিত, এই জন্ম-মৃত্যুর প্রবাহ আটকানো বা নিবারণ হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং এই বিষয় নিয়ে তোমার শোক করা উচিত নয় বলে অর্জুনকে বুঝিয়েছেন সখা কৃষ্ণ।
শ্রীকৃষ্ণ বুঝিয়েছেন জীবনে কর্তব্য কর্ম থেকে সরে যাওয়া যাবে না। বরং ধর্মযুদ্ধে তাঁর কর্তব্য অস্ত্র ধরা। বিশ্বে অনন্তকাল ধরে জন্ম মৃত্যুর প্রবাহ চলে আসছে। অনাদিকাল থেকে চলে আসছে এই প্রবাহ। অনন্তকাল চলতে থাকবে। এই দৃষ্টিতে দেখলে আর শোক করা উচিত নয়।
উপরে উল্লিখিত শ্লোকটির অবিকল প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় কবি মধুসূদন দত্তের লেখায়।
জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে।
চিরস্থির কবে নীর হায়রে জীবন-নদে।।
স্বামী বিষ্ণুপুরীর লেখা 'গল্পে গীতা' নামক একটি বইতে গীতার এই শ্লোক বোঝাতে একটি জাতকের গল্পের উদাহরণ টানা হয়েছে। একবার এক শোককাতর মা তার মৃত শিশু কোলে নিয়ে কেঁদে বেড়াচ্ছিল। সে শুনেছিল ভগবান তথাগত বুদ্ধ সর্বশক্তিমান। তাই তাঁর কাছে এসে সন্তানের জীবনভিক্ষা চাইল। বহুভাবে সান্ত্বনা দিলেও সে মা শুনতেই চাইছিল না। শেষে তিনি বললেন, “তোমার শিশুর জীবন ফিরে পেতে হলে সরষে নিয়ে এস। এমন বাড়ি থেকে আনবে যে বাড়িতে আজ পর্য্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি। তবেই ঐ সরষে কাজে লাগবে। কিন্তু হাজার খুঁজেও তেমন একখানি বাড়ি পাওয়া গেল না। তখন সে বুধল, যা অনিবার্য সত্য তার জন্য আর দুঃখ করে লাভ কী !
এই ভাবে আত্মা এক দেহরূপ ত্যাগ হলে দেহটির মৃত্যু হয় এবং অন্যরূপ গ্রহণ করলে নতুন জন্ম হয়।
আরও পড়ুন :
মৃত্যুর পর আত্মার কী হয়? কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে কী বলেছিলেন সখা কৃষ্ণ?