আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার সময় গীতা ছুঁয়ে সত্য বচনের শপথ নেওয়ার রীতি রয়েছে। কারণ হিন্দুদের (Hindu) কাছে এতটাই পবিত্র গীতার বাণী (Gita) । মনে করা হয়, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা (Bhagvad Gita) হল সাক্ষাৎ ভগবানের অমৃত বাণী। হিন্দুধর্মে গীতার মহিমা অপরিসীম। অসীম। গীতার সপ্তম অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, জগৎজুড়ে এই যে অগণিত মানুষ ভগবানের সাধনা করেন, তাঁদের মধ্যে কতজনের ভগবানকে ঠিকঠাক জানার সৌভাগ্য হয়। কারই বা জানতে পারেন ঈশ্বরকে। গীতার সপ্তম অধ্যায়ে শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন,
মনুষ্যাণাং সহস্রেষু কশ্চিদ্ যততি সিদ্ধয়ে ।
যততামপি সিদ্ধানাং কশ্চিন্মাং বেত্তি তত্ত্বতঃ ॥৩॥
এই শ্লোকের অর্থ কী । ভগবান এখানে বলতে চেয়েছেন, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাঁকে ডাকছেন। এর মধ্যে কোনও একজনই তাঁকে লাভ করার জন্য চেষ্টা করেন। আর সেই যত্ন সহকারে যাঁরা ডাকেন, তাঁদের মধ্যে কোনও একজনই তাঁকে তত্ত্বতঃ জানতে সক্ষম হন। শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী) অনুসারে, মনুষ্যজন্ম অতি দুর্লভ। সহজে কেউ মানুষ রূপে জন্ম নিতে পারে না। ভগবানের অত্যন্ত কৃপায় মানুষের জন্ম লাভ হয় । কারণ একমাত্র মানুষেরই ভগবদ্গপ্রাপ্তির জন্য সাধনা করার জন্মসিদ্ধ অধিকার থাকে। ভগবানের প্রকৃত রূপ জানার জন্য কোনও বিশেষ জাতি, বর্ণ, আশ্রম
ও দেশের বিভিন্নতায় কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তাবলে সকলেই কী আর ভগবানকে প্রকৃতভাবে চিনে উঠতে পারেন?
মনুষ্যেতর যত প্রাণী আছে, তারা কিন্তু এই সাধনা করতে পারেন না। তাদের নতুন কর্ম করার অধিকার নেই । মানুষ ব্যাতীত কোনও প্রাণী ভগবদ্গপ্রাপ্তির জন্য সাধনা করতে পারে না। যেমন, পশু পক্ষী, কীট-পতঙ্গদের ভগবানের সাধনা করার শক্তি বা যোগ্যতা থাকে না।
ঈশ্বরের অশেষ কৃপার ফলে মনুষ্যদেহ লাভ হয়। কিন্তু সেই জন্মকে সকলে ঈশ্বর সাধনার কাজে লাগাতে পারে না। বেশির ভাগ মানুষেরই ভোগে অত্যন্ত আসক্তি থাকে। ভগবানে শ্রদ্ধা-প্রেমের অভাব থাকায় বেশিরভাগ মানুষ ঈশ্বরকে জানার পথে মুখই ফেরায় না। যাঁদের পূর্বকৃত পুণ্যের ফল আছে ও যাঁরা সৎপুরুষের সঙ্গ পেয়ে থাকেন, হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এমন কেউ কেউ হয়তো ঈশ্বরকে প্রকৃতভাবে চেনার সাধনা করেন। যাঁদের মন অহংকার, মমতা, কামনা, আসক্তি ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ তাদের কাজে নানাপ্রকার বিঘ্ন আসে। তাই অত্যন্ত কম ব্যক্তিই এই পথে যান।
আরও পড়ুন :