সাধুব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য, পাপীদের বিনাশের জন্য, অনাচারের সময় ধর্ম সংস্থাপনের জন্য, ভগবান যুগে যুগে অবতার রূপে প্রকট হন বিশ্বে। এ কথা গীতার চতুর্থ অধ্যায়  অর্থাৎ জ্ঞানকর্মসন্ন্যাসযোগে বলেছেন ভগবান। অর্জুনের (Arjun) জ্ঞানচক্ষু খুলে দেওয়ার জন্য নানাভাবে মার্গদর্শন করিয়েছেন পার্থসারথি। তিনি বলেছেন, কখন ও কেন তিনি ধরাধামে আসেন। ভগবান তাঁর জন্মবৃত্তান্ত শুনিয়েছেন অর্জুনকে। ভগবান বলেছেন, 'যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত । অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্ ৷৷ ' অর্থাৎ যখন যখন পৃথিবীতে ধর্ম সঙ্কটাপন্ন হয়, অধর্ম দাপট দেখায়, তখনই দুষ্টের দমন আর সৃষ্টের পালনের স্বার্থে কৃষ্ণ কোনও না কোনও অবতারে পৃথিবীতে আসেন। পরের শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ (Lord Krishna) বলেন, 


'পরিত্রাণায় সাধুনাং চ বিনাশায় দুষ্কৃতাম্ ।  
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে ৷৷ ' 


এখানে ভগবান বলতে চেয়েছেন, পৃথিবীতে অধর্ম মাথাচাড়া দিলে নিরপরাধ, সদাচারী ও  ঈশ্বর ভক্তদের ওপর অত্যাচার করে দুর্বৃত্তরা। যতরকম ছল, কপট, চুরি, ব্যভিচার ইত্যাদি চলতে থাকে। তখন বিশ্বে ধর্মের প্রতিষ্ঠার জন্য ঈশ্বর  এই অধার্মিক খারাপ মানুষগুলির বিনাশ করে। ‘দুষ্কৃতম্' শব্দটি বলতে এখানে দুষ্ট ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে। ভগবান এদেরই বিনাশ করে। তাদের প্রাণে মেরেও শিক্ষা দেন ভগবান। এখন অনেকের মনেই এই প্রশ্ন জাগে, ঈশ্বর তো পরম দয়ালু, তাহলে তিনি অন্যায়কারীদের বিনাশ করেন কেন ? তিনি চাইলেই তো সুপথে ফেরাতে পারেন তাঁদের। বুদ্ধিনাশ হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারেন। তাহতে হত্যা কেন ? 

গীতার ব্যাখ্যা বলছে, দুষ্টকে যখন দণ্ডপ্রদান বা  মৃত্যু প্রদান করেন ভগবান, তখনও তাঁর মন থেকে কিন্তু দয়াভাব যায় না। আসলে মৃত্যু দিয়েও ভগবান তাদের পাপনাশই করে । ভগবানের দণ্ড দেন কেন? শ্রীমদভগবদ্ গীতা, (তত্ত্ববিবেচনী) এর একটি সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছে। মা যেমন সন্তানের হাত, পা বা অঙ্গের কোথাও স্থানে ফোড়া হলে তাতে প্রথমে মলম বা প্রলেপ দেন। কিন্তু যদি তা নিরাময় না হয় ও তার থেকে সর্বাঙ্গে বিষ ছড়িয়ে পড়ে,  তখন সন্তানকে বাঁচাতে অঙ্গ বাদ দিতেও দ্বিধা করেন না অভিভাবকরা। ঠিক তেমনটাই করে থাকেন ভগবান।  শাস্তির ভয় দেখিয়েও যখন কোনও লাভ হয় না, তখনই তাকে বিনাশ করার কথা ভাবেন ভগবান।  (Bhagavad Gita)


আরও পড়ুন :


মৃত্যুর পর আত্মার কী হয়? কুরুক্ষেত্রে অর্জুনকে কী বলেছিলেন সখা কৃষ্ণ?