সুনীত হালদার, হাওড়া: সেই জমিদার নেই। নেই দুর্গা পুজোর আড়ম্বর। তবে আজও প্রথা মেনে চলছে পারিবারিক দুর্গা পুজো। আমতার তাজপুরের জমিদার রায় বাড়ির দুর্গা ৫০০ বছর ধরে একইভাবে পুজিত হয়ে আসছে। আমতার রাজপুরে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল জমিদার বাড়ি।


কালের নিয়মে গোটা বাড়ি ভগ্ন দশার  চেহারা নিয়েছে। তবে পুজো এলে বাড়ির ঠাকুর দালানে আজও নিয়ম করে পরিষ্কার করা হয়। পরে রংয়ের প্রলেপ। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন বর্ধমানের মহারাজা দুর্লভচন্দ্র রায় আমতা তাজপুরে মুকুটরাম রায়কে জমিদারি দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দুর্লভচন্দ্র রায়ের নির্দেশেই এই বাড়িতে দুর্গা পুজোর শুরু হয়।


বাড়ির বংশধর মানস রায় জানিয়েছেন শুধু তাজপুরে নয় তার আশপাশ গ্রামেও দুর্গা পুজো শুরু হয়। দুর্গাপুজো হয় প্রাচীন বৈদিক রীতি মেনে। আগে মোষ বলি হলেও সেই বলি প্রথা অনেকদিন আগেই উঠে গেছে। আগে পুজোর সময় গোটা গ্রামের প্রজাদের খাওয়ানো হতো। ঝাড়বাতি লাগানো হতো। বাড়িতে যাত্রার আসর বসত। কিন্তু এখন ওসব না হলেও ঐতিহ্য মেনে পুজো হয়। ঐতিহ্যের টানে গ্রামবাসী এবং আত্মীয়-স্বজনরা পুজোর সময় ভিড় জমান রায় বাড়িতে।


মানসবাবু আরও বলেন, এই জমিদার বাড়ির কুল বিগ্রহ শ্রীধরের নামে  দেবত্ব সম্পত্তি আছে। সারা বছর জমি এবং পুকুরের আয় থেকেই এই পুজো চলে আসছে।পরিবারের সদস্য শুভ্রা রায় বলেন, মহালয়ার পরদিন থেকেই ৫ দিন চন্ডী পুজো শুরু হয়। ষষ্ঠীর রাতে বেলতলায় পুজোর পর সপ্তমীর দিন সকালে বাড়ি সংলগ্ন পুকুরে কলা বউ স্নান করানো হয়। এরপর পুজোর দালানে প্রতিমার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। পুজোর চার দিনই সমস্ত রীতি মেনে হোম, যজ্ঞ এবং আরতি চলে। ওখানেই চলে খাওয়া-দাওয়া। দশমীর দিনে বাড়ির মেয়েরা প্রতিমা বরণ এবং সিঁদুর খেলার পর ভাসান হয়।


আরও পড়ুন, পেট্রোল ও ডিজেলের দরে বদল, আজ জ্বালানি ভরাতে খরচ কত ? 


শারদ উৎসব শুরু হতে আর কয়েকদিন বাকি। অতিবৃষ্টির পর নীল আকাশে এখন সাদা মেঘের ভেলা। জলাশয়ের পাশে হাওয়ায় দুলছে কাশফুল। সর্বত্রই উৎসবের প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। বারোয়াড়ির পাশাপাশি বাড়ির পুজোতে ও চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। হরিপাল থানার নালীকুল বড়গাছিতে ২৯৩ বছরের প্রাচীন সিংহ, বসু মল্লিক ও রায় পরিবারের পুজো ঘিরে পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততা চরমে। পুজোর আয়োজনে যেনও কোনও খামতি না থাকে তা নিয়ে বৈঠক চলছে ঠাকুন দালানে। এখনও প্রাচীন রীতিনীতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে দেবীর আরাধনা করে থাকেন এই তিনটি পরিবার। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।