কলকাতা : জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রতি মঙ্গলবার বাংলায় প্রচলিত জয় মঙ্গলবারের ব্রত। এই ব্রত উদযাপনের রীতি রয়েছে বিবাহিত , অবিবাহিত সকলের মধ্যেই। মঙ্গলচণ্ডীর ব্রত পালন যাঁরা করেন, তাঁদের কোনও সঙ্কট দমাতে পারে না, দেবীর কৃপায় সব মুশকিল আসান হয়। এই বিশ্বাস থেকেই বাংলার ঘরে ঘরে জয় মঙ্গলবার ব্রতপালন। জয়মঙ্গলবারে গরমকালের ফল দিয়ে দই, চিঁড়ে খাওয়ার রীতি আছে। এবার মঙ্গলবারগুলি পড়েছে, ২১,২৮ মে। ৪ ও ১১ জুন।
- ব্রতকথার গল্প থেকে জানা যায়, এই ব্রত করে কীভাবে জয়াবতী শ্বশুরবাড়িতে নানা বিপদ-আপদ কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল। জয়দেব ও জয়াবতী সেখানে নবদম্পতি। জয়াবতী জয়মঙ্গলবারের ব্রত করে। তাঁর বিশ্বাস এই ব্রত করলে হারালে পায়, স্বামী-পুত্র জলে ডোবে না, আগুনে পোড়ে না, মরলে বাঁচে। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথেই জয়দেব জয়াবতীর সব গয়না ও কাপড় ভুলিয়ে নিয়ে নেয়। আর জলে ফেলে দেয়। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে গঞ্জনা শোনে বউ। এরপর আশ্বর্য ভাবে বৌভাতে মাছ কাটতে গিয়ে জয়াবতী মাছের পেট থেকে পায় গয়নার থলি। সেই মাছ জল থেকে ওই পুঁটুলি গিলে নিয়েছিল। জয়াবতী বোঝে সবই দেবীর দয়া। জয়দেব যতবারই তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করে, ততবারই জয়াবতীকে উদ্ধার করে দেন দেবী মঙ্গলচণ্ডী। অবশেষে নানা পরীক্ষার পর জয়দেবও মেনে নিল মঙ্গলচণ্ডীর মহিমা। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ল মঙ্গলচণ্ডীর মাহাত্ম্য।
জয় মঙ্গলবারের ব্রত পালন করতে হয় জ্যৈষ্ঠের চারটি মঙ্গলবার। অনেকে দুটি মঙ্গলবার ব্রতপালন করেন। আবার কেউ কেউ একটি সংক্ষিপ্ত ব্রত পাঠ করেন। সেটি হল -
সোনার মঙ্গলচন্ডী রুপোর বালা/ কেন মা মঙ্গলচন্ডী এতো বেলা
হাসতে খেলতে,তেল হলুদ মাখত / শাঁখা শাড়ি পরতে,আঘাটার ঘাট দিতে,
অপথে পথ করতে,অরাজ্যকে রাজ্য দিতে/ আইবুড়োর বিয়ে দিতে,নিধনের ধন দিতে
হা-পুতির পুএ দিতে ,অন্ধের চক্ষু দিতে/ তাই এতো বেলা ॥
কীভাবে ব্রতপালন ?
এই ব্রতে লাগে -
- ১৭টি গোটা সুপারি
- ধান
- দূর্বা
- ফুল
- ফল
- বেলপাতা
- পাকা আম
- কাঁঠাল
দেবী মঙ্গলচণ্ডীর আরাধনা করতে গেলে কাঁঠাল পাতায় দূর্বা ঘাস, ধান, যব, মুগ কলাই রেখে খিলি বানিয়ে মা চণ্ডীকে প্রথমে নিবেদন করা হয়, পরে কলার মধ্যে সেই ধান যব পুরে গিলে খেতে হয়। এই দিন আমলা বাটা এবং হলুদ দিয়ে স্নান করানো হয় প্রথমে দেবীকে। তারপর পাঁচ ফল দান করতে হয়।