কঙ্কালী ( Kankalitala ) মায়ের মন্দির। বীরভূম ( Birbhum ) জেলার অন্যতম পর্যটনক্ষেত্র শান্তিনিকেতন। তার খুব কাছেই কঙ্কালীতলা। বীরভূমের অন্যতম সতীপীঠ ও পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে শেষ সতীপীঠ। কারণ এখানেই পড়েছিল সতীর কাঁখাল, যা এসে পড়েছিল এখানকার কুণ্ডের জলে। এই মন্দিরে নেই কোনও মূর্তি। মা পূজিত হন পটেই। গলায় একের পর এক জবার মালা।
এই কুণ্ডের ঈশাণ কোনে দেবী সতীর কাঁখাল নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। মানুষের বিশ্বাস, দেবী ছাড়াও কুণ্ডে পঞ্চশিব অবস্থান করছেন। কোমর বা কাঁখাল থেকে স্থানীয় ভাবে দেবীর নাম রয়েছে কঙ্কালী। তবে পৌরাণিকভাবে এখানকার দেবী বেদগর্ভা নামেই পরিচিত। প্রচলিত নামানুসারেই এলাকার নাম হয়েছে কঙ্কালীতলা। লোকশ্রুতিতে এই কুণ্ডের মাহাত্ম্য মুখে মুখে।
বীরভূম জেলায় জলকষ্ট অনেক জায়গায়, কিন্তু প্রবল গরমেও এখানে কুণ্ডে জল টলটল করে। এই মন্দির আর পাঁচটা সতীপীঠের থেকে অনেকটাই আলাদা। কেন ? কারণ এখানে কোনও শিলামূর্তি নেই। আছে পাথরের বেদীর ওপর সতীর কালীরূপী এই চিত্রপট। মায়ের গর্ভগৃহের সামনে দাঁড়িয়ে নিশ্চিন্তে পুজো করা যায়। মন্দিরের সামনের রাস্তায় সারি দেওয়া দোকান থেকে পুজোর ডালা কিনে পুজো দেওয়া যায়। নিজেরাই মায়ের সামনে গিয়ে পুজো দিতে পারা যায়। দেওয়া যায় অঞ্জলিও।
চৈত্র সংক্রান্তিতেই দেবীর মূল উৎসব। সেদিন এই কুণ্ডেই মায়ের পুজো করা হয়। সে সময় মন্দিরকে ঘিরে মেলা বসে। দেবীপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে এই কুণ্ডের ধারে একান্ন কুমারীর পুজো করা হয়। সতীদেহের ৫১টি খণ্ডকে সংকল্প করে একটি ঘট স্থাপন করা হয়। এরপর কঙ্কালিতলা কালী মন্দির সংলগ্ন পঞ্চবটী গাছের নীচে পুজো করা হয় ৫১ জন কুমারীকে।
এই মন্দিরের পিছনের অংশ আজও বনস্পতির ছায়া সুনিবিড়। মন্দির থেকে খুব দূরে নয় শ্মশান। যুগে যুগে বহু তন্ত্র সাধক সাধনা করে গেছেন এই জায়গায়। এখনও বহু সাধক আসেন, মন্দিরকে ঘিরে নানা সময় তাঁরা হোমযজ্ঞ করেন। আগত ভক্তরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন।
৫১ পীঠের শেষ পীঠ কঙ্কালীতলা। সারাবছর দেবী কঙ্কালী পূজিত হয়ে থাকেন। কালীপুজোতে মা কঙ্কালী মহাকালী রূপে পূজিত হন। মন্দিরের সামনে বহু প্রাচীন বটগাছের নীচে আয়োজন করা হয় কুমারী পুজোর। হোম-যজ্ঞের পাশাপাশি নিবেদন করা হয় বিশেষ ভোগ। মনস্কামনা পূরণ করবেন দেবী, সেই প্রার্থনা জানিয়ে দীপ জ্বেলে কুণ্ড প্রদক্ষিণ করেন বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ভক্তরা।